****বীরমুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট আবুল খায়ের******
এডভোকেট এ.কে. এম. আমিন উদ্দিন (মানিক)
এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট, সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতি, নোয়াখালীর কৃতি সন্তান, নোয়াখালী জেলার সাবেক সরকারী উকিল, নোয়াখালী আইনজীবী সমিতির দুই মেয়াদে সাধারণ সম্পাদক ও দুই মেয়াদে সভাপতি,আইন বইসহ একজন লেখক।
তিনি নোয়াখালী জেলার সদর উপজেলার সুধারাম থানাধীন ৬নং নোয়াখালী ইউনিয়নের মধ্য চরউরিয়া গ্রামের নিজ পৈত্রিক বাড়িতে এক সভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ৭ জানুয়ারী ১৯৫২ সনে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি নোয়াখালীতে আইনপেশায় থাকাকালীন নোয়াখালী পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডে উত্তর ফকিরপুরে ল’চেম্বার ও বসতবাড়ি করেছেন। বর্তমানে ঢাকায় উত্তরা আবাসিক এলাকায় ৪ সেক্টরে বসবাস করেন। তাঁর আইনপেশা পরিচালনার জন্য বিজয়নগরে শহীদ নজরুল ইসলাম সড়কে ১৭৭ নং মাহতাব সেন্টারের ৪র্থ তলায় ৭ নং স্যুটে এবং সুপ্রীমকোর্ট বার এনেক্স ভবনের ৩৪০ নং রুমে চেম্বার আছে। তাঁর পিতার নাম মরহুম হাফেজ আরেফ হোসেন ও মাতার নাম মরহুমা রাবিয়া খাতুন।
তিনি চরউরিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণি ও সোনাপুর আহমদিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কুমিল্লা বোর্ডের অধীনে ’৬৭ সনে এস.এস.সি পাশ করেন। ’৬৯ সনে নোয়াখালী সরকারী কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পাশ করেন। চট্রগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের অধীনে নোয়াখালী সরকারী কলেজ থেকে ইংরেজী মাধ্যমে বি.এ.ডিগ্রি অর্জন করেন। সকল পাবলিক পরীক্ষায় তিনি মেধায় ঝঃরঢ়বহফ প্রাপ্ত হন। ১৯৭৫-৭৬ সনে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অধীনে ইংরেজী মাধ্যম নিয়ে ২য় শ্রেণি প্রাপ্ত হয়ে এলএল.বি ডিগ্রি অর্জন করেন। ’৭৫ সনের ৭ মে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নোয়াখালী জেলা শাখার সহ-সভাপতি কামালউদ্দিনকে জাসদের গণবাহিনী বসুরহাট বাজারে গুলি করে হত্যা করলে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের এম.এ.(অর্থনীতি) চলমান পরীক্ষা ছেড়ে নোয়াখালী চলে যান। সেখান থেকে বসুরহাটে ছাত্র-জনতার প্রতিবাদ সভা ও আন্দোলনে বর্তমান মন্ত্রী তৎকালীন ছাত্রনেতা ওবায়দুল কাদের সহ অংশ গ্রহণ করেন। ২৮ জানুয়ারী ’৭৮ সনে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল থেকে আইনপেশা পরিচালনার অনুমতি প্রাপ্ত হয়ে ২৮ফেব্রুয়ারী ’৭৮ সনে নোয়াখালী আইনজীবী সমিতির সদস্য পদ গ্রহণ করেন। ২৮ আগস্ট ’৮৬ সনে বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে ও ২০১০ সনে অ্যাপিলেট ডিভিশনে আইনপেশা পরিচালনার অনুমতি প্রাপ্ত হন।
আইনপেশার শুরুতে নোয়াখালীর প্রখ্যাত আইনজীবী শ্রী বিপ্র প্রসাদ রায়ের সাথে জুনিয়রশীপ করার সৌভাগ্য হয়েছিল। ’৮৯-৯০ সনে পরপর দুইবার নোয়াখালী জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২য় মেয়াদে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হন। ২০০০ ও ২০০১ সনে দুই বার জেলার জি.পি. পদে থাকা অবস্থায় নোয়াখালী আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১৫-১৬ সনের বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন।
তিনি হাইস্কুলে পড়াকালীন ৯ম শ্রেণি থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৬৫ সনে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর তৎকালীন হোটেল শাহবাগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে আসেন । বঙ্গবন্ধু সেদিন বলেছিলেন কিভাবে পশ্চিম পাকিস্তান তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানকে শোষণ ও অবহেলা করছে। সেই শোষণের বিষয় উপলব্ধি করে তাঁর ছাত্রলীগে যোগদান। ’৬৭ সনে নোয়াখালী সরকারী কলেজ ছাত্র-সংসদে ছাত্রলীগের মনোনিত প্রার্থী হিসেবে সকল প্রার্থীদের মধ্যে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন। এই সময় ছাত্রলীগের নোয়াখালী কলেজ শাখার সহ-সভাপতি ছিলেন। ’৭২ সনে নোয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক কমিটির আহবায়ক হিসাবে মনোনিত হয়ে ৩ মাসের মধ্যে জেলা সম্মেলন করে নোয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের পরিপূর্ণ কমিটি গঠন করেন। ছাত্রলীগের রাজনীতির এই দুঃসময়ে তিনি মাহমুদুর রহমান বেলায়েতের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সারা জেলায় ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করেন। গোলাম সারওয়ার,লুতু, আজিজুর রহমান ইকবালসহ আরো অনেকের অবদানের কথা উল্লেখ করেন। ’৭২ থেকে ’৭৫ পর্যন্ত দুই মেয়াদে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ’৭৫ সনে নব গঠিত জাতীয় ছাত্রলীগের ঘোষিত সাধারণ সম্পাদক হন।
তিনি ’৭৭ সনে নোয়াখালী জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। তাঁর নেতৃত্বে তখনকার সময়ের প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পুরো জেলার প্রতিটি থানার প্রতিটি ইউনিয়নে শহীদ উদ্দিন কচি,নুরুল হক সাহেব ও অধ্যাপক হানিফ সাহেবদের সহযোগিতায় আওয়ামী লীগের সম্মেলন করে কমিটি গঠন করা হয়। এরপর ’৮১ সন থেকে ২০০১ পর্যন্ত নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নিকট থেকে দলীয় মনোয়ন চেয়েছিলেন ।
আইনপেশায় তিনি প্রধানতঃ দেওয়ানী মামলা করেছেন। তিনি ’৯৬ সন থেকে ২০০১ সন পর্যন্ত নোয়াখালী জেলার সরকারী উকিল(জি.পি) হিসেবে সুনামের সহিত দায়িত্ব পালন করেন। তিনি নানাবিধ সামাজিক কার্যক্রমের সাথে জড়িত ছিলেন ও আছেন। নোয়াখালী রোটারী ক্লাবের চার্টার প্রেসিডেন্টসহ ৫ বার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। নোয়াখালী পাবলিক লাইব্রেরীর আজীবন সদস্য ছিলেন ও ৩ বার সম্পাদক ছিলেন। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্টের আজীবন সদস্য, বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির আজীবন সদস্য, নোয়াখালী পাবলিক কলেজের নির্বাহী কমিটির সদস্য, নোয়াখালী ইউনিয়ন হাইস্কুলের পরিচালনা পরিষদের ’৮৭ সন থেকে অদ্যাবধি সভাপতি,নোয়াখালী জেলার সুধারাম থানার কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতির ২০০০ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত দুই মেয়াদে সভাপতি ছিলেন। নিজ এলাকার মসজিদ কমিটির তিনি দীর্ঘ সময় সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। ঢাকাস্থ নোয়াখালী জেলা সমিতির আজীবন সদস্য। ’৮৪ থেকে ’৯৫ পর্যন্ত নোয়াখালী জেলা শাখা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দেওয়ানী রিভিশন,প্রথম বিবিধ আপীল, প্রথম আপীল, ফৌজদারী বিবিধ,ফৌজদারী আপীল, রীট মামলা এককভাবে পরিচালনা করে আসছেন। চলমান অনেক দেওয়ানী রিভিশন, এফ.এ;এফ.এম.এ, ফৌজদারী রীট সহ বিবিধ মামলা করছেন।
তিনি মুক্তিযুদ্ধের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন ’৭১ সনের অসহযোগ আন্দোলন শুরুর সময় মিছিল-মিটিং-এর ফাঁকে নোয়াখালী কয়েকটি সেক্টরে ভাগ হয়। সংক্ষিপ্ত গেরিলা ট্রেনিং নিয়ে তিনি নোয়াখালীতে সি-সেক্টরের সাথে কাজে জড়িয়ে পড়েন। যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন বীরমুক্তিযোদ্ধা মরহুম আলী আহাম্মদ চেয়ারম্যান, মুক্তিযোদ্ধা লেদু মিয়া চেয়ারম্যান, সফিকুর রহমান চেয়ারম্যান,জয়নাল আবেদীন ও কারী করিম উল্লাহ। সশ্রস্্র যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন বাংলাবাজারের হাবিলদার সিরাজ ও সুজাপুরের মোশাররফসহ । তাঁরা দুইজন সেনাবাহিনীর সদস্য ছিল বিধায় তাঁদের কাছে আরো ট্রেনিং নেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তাঁদের কাছে এস.এল.আর, এস.এম.জি ও চাইনিজ রাইফেল চালানো শিখেন এবং বিস্ফোরক দ্রব্যাদির ব্যবহার শিখেন। দীর্ঘসময় রাজগঞ্জের পশ্চিমে দারোগাবাড়িতে ক্যাম্প ছিল( এডভোকেট নিত্য গোপাল দেবনাথের বাড়ি)। তাঁরা ছিলেন কর্ণেল হায়দারের অধীনে মুক্তিবাহিনীতে।
জুনের দিকে দারোগা বাড়ি ক্যাম্প পাকিস্তান সেনাবাহিনী আক্রমণ করে। সেইদিন মুক্তিযোদ্ধাদের জনবল কম ছিল। কারণ ছিল এর পূর্বে কয়েকটি অপারেশন করার পর অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। সেই দিন পুরো দারোগা বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা ও অস্র গুলি অন্য দুই বাড়িতে থাকতো, অন্য জায়গায় থাকায় রক্ষা পায়। দারোগা বাড়িটি ছিল নামে মাত্র ক্যাম্প। সেইদিন ইনফরমার মোজাম্মেল হক মন্টু পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনটি ফাঁকা গুলি ছুড়ে সিগনাল দেওয়ায় রক্ষা। সেই দিন তিনিসহ সফি ভাই ও আলী আহাম্মদ চেয়ারম্যান ক্যাম্পে ছিলেন। পাটক্ষেতের ভিতর দিয়ে যাওয়ার সময় পাক-বাহিনী ব্রাশ ফায়ার শুরু করে। সেই দিন আল্লাহর রহমতে কাঁদা পানিতে শুয়ে পড়ে আত্মরক্ষা করেন।পরে সফি ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং তিনি ও কমান্ডার মোশাররফ দুই জনে একটি নৌকার মধ্যে অস্্র, চাল ও কুমড়া নিয়ে ওঠেন। সেই নৌকায় খালে-বিলে ৪/৫ দিন কেটে যায়। পরবর্তী পর্যায়ে ছয়ানী ইউনিয়নে নতুন করে ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। ক্যাম্প স্থাপনে কারী করিমুল্লাহ সহযোগিতা করেন। বিছিন্ন সকলকে একত্রিত করা হয়। পরে চরমটুয়া মাইচচরা এলাকায় চেয়ারম্যান মরহুম লেদু মিয়াসহ ক্যাম্প স্থাপন করেন। পরবর্তীতে তিনি স্বয়ং বর্তমান মান্নান নগর এবং চৌরাস্তাবাজারের পাশে দুশতাধিক মুক্তিবাহিনী নিয়ে একটি সাব্-ক্যাম্প পরিচালনা করেন।
স্মরণীয় ছিল নোযাখালী সদর পশ্চিমে খলিফার হাটে মমিন মিয়া সহ কয়েকজনকে পাকবাহিনী গুলি করার সময় পাশের ধানক্ষেতে পড়ে থেকে তিনি রক্ষা পান। সে দিন রাজাকাররা তাঁকে বেঁধে ফেলেছিল। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাঁদের পরিকল্পনায় ভুল ছিল এবং পাক-বাহিনীর ভারী অস্্েরর মুখে তাঁরা প্রত্যক্ষযুদ্ধে খুবই বিপর্যয়ে পড়েছিলেন ।
৭ ডিসেম্বর মান্নান নগরের ক্যাম্প থেকে সকল ক্যাম্পের সাথে যোগাযোগ করে মাইজদি শহর শত্রুমুক্ত করেন। সেইদিন মরহুম হাজী ইদ্রিসের নেতৃতে ডি-সেক্টরের ক্যাপ্টেন রফিকসহ ছিলেন। সেইদিন মুজিববাহিনীর নোয়াখালী জেলার প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েতসহ পরিকল্পিতভাবে মাইজদি শহর আক্রমণ করা হয়। প্রথমে দত্তেরহাট রাজাকার ক্যাম্পের পতন হয়। এর পর একে একে পতন উৎসব শুরু হয়, সন্ধা নাগাদ পাকবাহিনীর ক্যাম্প পি.টি.আই ক্যাম্পের পতন হয় এবং পাকসেনারা আত্মসমর্পণ করে। স্বাধীনতা পরবর্তী বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে অস্্র জমা দেন।
তিনি ’৭১ সনের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ পরদিন রেডিওতে শুনেছিলেন। ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা সাইক্লোস্টাইল করে প্রকাশ করা হয়। যা তাঁরা নোয়াখালী মাইজদীতে ২৬ ও ২৭ মার্চ পান। তখন ইহা বহুলভাবে প্রচারিত হয়।
’৭২ সনে ছাত্রলীগের বর্ধিত সভা চলাকালে তৎকালীন ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ শহীদুল ইসলামের নেতৃত্বে সুগন্ধা গনভবনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে দেখা করার সুযোগ হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু পিঠে হাত থাপড়িয়ে উৎসাহ দিয়েছিলেন। তখন তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। পরে ’৭২ সনে বঙ্গবন্ধু নোয়াখালী গেলে ভুলু ষ্টেডিয়ামে ২য় বার বঙ্গবন্ধুর সাখে দেখা হওয়ার সুযোগ হয়েছিল।
১৯৭৫ সনের ১৫ আগস্ট রাতে জাতির জনকের সপরিবারে নির্মম হত্যাকান্ডের দিন তিনি মহসিন হলের ২১৯ নং রুমে ছিলেন। সকাল ৮ টার দিকে ফজলুল হক নামে একজন ছাত্রনেতা প্রথম খবর দেয় । সেই দিন নির্বাক মর্মাহত হয়ে সারাটা দিন কেটেছে। তিনি দ্রুত শেখ শহীদের সাথে দেখা করার চেষ্টা করেছেন। শেখ শহীদ তখন শ্বশুর সালেদীন সাহেবের বাসায় ছিল । তাঁর মতে ১৫ আগস্টের জাতির জনকের হত্যাকান্ড শুধু বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারকে হত্যা করা হয়নি। ১৫ আগস্ট বাঙ্গালী জাতি সত্তার উপর আঘাত হানা হযেছে এবং তখনকার সামরিক বাহিনী, পুলিশ, বি.ডি.আর ও রক্ষী বাহিনীর অদেখা ব্যর্থতা ছিল যা জাতির কাছে ক্ষমাহীন। কয়েকজন সেনাবাহিনীর দলছুট লোক চোরের মত বঙ্গবন্ধুকে আক্রমণ করে হত্যা করাটা অবিশ্বাস্য। যেখানে আমাদের বিশাল সেনাবাহিনী, পুলিশ, বি.ডি.আর ও রক্ষী বাহিনী ছিল। সে দিন ৩ ঘন্টা বঙ্গবন্ধু তাঁর নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা দিয়ে হত্যাকারীদের আটকিয়ে রাখতে পেরেছিলেন। তিনি মনে করেন বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের জন্য তখনকার সেনাপ্রধান সফি উল্লাহ ও উপ প্রধান সেনাপ্রধান মেজর জিয়াউর রহমানের ব্যর্থতা ও আনুগত্যহীনতার মরনোত্তর বিচার হওয়া উচিত। সে দিন উপ-প্রধান সেনা-প্রধান বলেছিলেন প্রেসিডেন্ট মারা গেলে ভাইস-প্রেসিডেন্ট আসবে। এতে স্পষ্টতঃ যে, সে ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত ছিল।
তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময কযেকবার শত্রু আক্রান্ত হযে মৃত্যুর মুখোমুখি হন। আর গনবাহিনীর সময় ঝুকিপূর্ণ জীবন যাপন করেন বলে উল্লেখ করেন।
তিনি এ পর্যন্ত হৃদয়ের টানে ৪ বার জাতির জনকের সমাধি জেয়ারতে টুঙ্গীপাড়া গিয়েছিলেন। প্রথম বার ,৭৭ সনে গিয়েছিলেন তখন বঙ্গবন্ধুর মাজার বর্তমান অবস্থায় ছিল না। পরে ২০০৭ সনে একবার ও ২০১৫ সনে দুই বার গিয়েছেন। বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতিতে সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর নির্বাচিত সদস্যসহ নেতৃবৃন্দকে নিয়ে একবার গিয়েছিলেন।
তিনি বাংলাদেশে দর্শনীয় জায়গা কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, সিলেটের জাফলং, দিনাজপুর,বগুড়া, রংপুর, নাটোর, হিলি সীমান্ত, বড় পুকুরিয়া খয়লা খনি পরিদর্শন করেছেন।
তিনি বিদেশে ভারত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া সফর করেছেন।
তিনি ছয় ভাই-বোনের মধ্যে ২য়। আরো দুই ভাই আইনজীবী । তারা নোয়াখালী বারে আইনপেশা পরিচালনা করে আসছেন। একজন হলেন এডভোকেট আবু জাহের ও অন্যজন এডভোকেট আতাউর রহমান নাছের । আতাউর রহমান নোয়াখালী সুধারাম থানা আওয়ামীলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক।
তিনি ’৭৯ সনের ১৮ জুন সন্দ¦ীপ নিবাসী পুলিশের অত্যন্ত সৎ কর্মকর্তা সাবেক ডি.এস.পি.মরহুম জিয়াউল হকের সর্বকনিষ্ঠ কন্যা লায়লা হককে বিয়ে করেন। বিয়ে শ্বশুরের কুমিল্লা শহরস্থ নানুয়াদীঘির ছনের ছাউনি যুক্ত নিজস্ব বাড়িতে হয়। তাঁর এক মেয়ে, দুই ছেলে।
প্রথম মেয়ে ফারহানা খায়ের(তনিমা),ইংরেজী অনার্সের ছাত্রী থাকাবস্থায় বিয়ে হয় নিজ গ্রামের সরকারী অবসর প্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর শাহ সুফিয়ানের ছেলে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার শাহ মকবুল হোসেন জুয়েলের সাথে। মেয়ে ও মেয়ের জামাই বর্তমানে সিঙ্গাপুরের নাগরিক, সেখানে নিজস্ব বাড়ি ঘর আছে । এছাড়া তারা মালয়েশিয়ায়ও ৩য় বাড়ি করেছেন। জুয়েলের সিঙ্গাপুরের মেরিনশীপ মেরামতের প্রতিষ্ঠান সহ যাবতীয় ব্যবসা আছে।
ছেলে ব্যারিস্টার আবু জুবায়ের হোসেন সজীব, হাইকোর্টে আইনপেশায় নিয়োজিত। সজীবের স্ত্রী সিলেট নিবাসী বিট্রিশ নাগরিক ডাঃ সালমা ইয়াসমিন রহমান। ছোট ছেলে আবু ইসতিয়াক হোসেন(সজল), সে এ-লেভেল করে এ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ডিপ্লোমা করছে।
তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চান, আইনের শাসন চান, ত্যাগের রাজনীতিতে বিশ^াসী। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারী কোন সুযোগ-সুবিধা যেমন সরকারী জমি বরাদ্দ ইত্যাদি কখনো নেননি। তিনি মনে করেন বিভিন্ন সরকারী সুযোগ-সুবিধা নেওয়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী। তাঁর মতে তালিকাভূক্ত মুক্তিযোদ্ধারাই শুধু মুক্তিযোদ্ধা নন, যুদ্ধাপরাধী রাজাকার আলবদর ব্যতিত বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী দেশের তখনকার ৯৯ ভাগ মানুষই মুক্তিযোদ্ধা, তারা সবাই মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন ও সহযোগিতা করেছে । সেই হিসেবে সকলে মুক্তিযোদ্ধার দাবীদার। তিনি মনে করেন আমাদের দেশে যেই বিরোধী দল থাকে তারা সঠিক দায়িত্ব পালন করে না। গনতন্ত্র রক্ষা ও দেশের উন্নতির স্বার্থে সুসংগঠিত বিরোধী দল প্রয়োজন। অগণতান্ত্রিক আচরণ দ্বারা বিরোধী দল চলে না। বঙ্গবন্ধু তাঁর শক্তিশালী বক্তব্য ও ছয় দফার মাধ্যমে অস্্রবিহীন যুদ্ধে দেশটিকে স্বাধীনতার দিকে নিয়ে গিয়েছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে আমৃত্যু থাকতে চান। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি অত্যন্ত আস্থাশীল । তিনি মনে করেন সুশাসন ও নেতৃত্বে শেখ হাসিনা এক নম্বরে আছেন। তাঁকে বঙ্গবন্ধুর মত আদর্শে অবিচল থাকায় শ্রদ্ধা করেন। নেত্রী বিশাল সরলতার সহিত কাজ করেন । তবে তোষামদকারীদের নিকট থেকে সতর্ক থাকতে হবে এবং দূনীতিবাজদের প্রতিহত করতে হবে।
তিনি মনে করেন এদেশে দুটি সেনাশাসন গনতন্ত্রকে নষ্ট করেছে। যার পূনর্গঠন করতে হচ্ছে। উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অর্জন শেখ হাসিনার যুগান্তকারী অর্জন ,এটাকে যেন তোষামদকারী দূর্নীতিবাজরা ভুল পথে নিতে না পারে সেই দিকে সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি মনে করেন বঙ্গবন্ধু ৪র্থ সংশোধনীর দ্বারা যেই বাকশাল প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন সেটি ব্যতিক্রম ধর্মী উন্নতমানের গণতন্ত্র হিসেবে স্বীকৃতি পেত। সেখানে সকল দলের অংশ গ্রহণ করার ব্যবস্থা ছিল। সেখানে দলীয় মনোনয়ন থাকার ব্যবস্থা ছিল না। বঙ্গবন্ধুর এই গবেষণার শুরুতে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর এই থিওরী বর্তমান রাষ্ট্রবিজ্ঞানে না থাকলেও ভবিষ্যতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের গবেষণার অংশ হতো।
ছাত্র রাজনীতি,মুক্তিযুদ্ধ, দলীয় রাজনীতি, আইনপেশার জীবনের অনেক নেতা, বন্ধু, সহযোগী, সিনিয়রের কথা তিনি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন । তাঁদের থেকে অনেক শিখেছেন, পারিবারিক জীবনে মায়ের কথা বেশী বেশী উল্লেখ করেন। দাদা, বাবা,স্ত্রী,সন্তান,ভাই-বোন ও আত্মীয় স্বজন গ্রাম ও শহরের প্রতিবেশীদেরকে স্মরণ করেন। স্ত্রীর কথা এমন ভাবে বলেন যেন সে হলো তাঁর সাথী নয় এঁরফব ধহফ ভৎরবহফ. তিনি মনে করেন খরভব রং ংযড়ৎঃ –অৎঃ রং ষড়হম. কাজেই জীবনের প্রতিটি মূহূর্ত ফুল ফোঁটানোর কাজে লাগাতে হব্ ।
তিনি আইনপেশার পাশাপাশি লেখালিখি করেন।। ইতিমধ্যে তাঁর লিখিত “ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু”, “ডাইরীর পাতা থেকে”, “ আমাকে কবি ভেবে ভুল করেছে” ও “৬৭ ুবধৎং ঈরারষ জবধফু জবভবৎবহপব” বই গুলি প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া বই পড়া, লাইব্রেরী করা পছন্দের বিষয় । তাঁর আইন বই এর সমৃদ্ধ লাইব্রেরী আছে এবং ব্যক্তিগত লাইব্রেরীতে অনেক দূর্লভ সংগ্রহ বিদ্যমান আছে।
সাক্ষাৎকারটি ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সনে গৃহিত।
No comments:
Post a Comment