বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব এডভোকেট মোঃ দেলোয়ার হোসেন শরিফ
এডভোকেট এ.কে.এম. আমিন উদ্দিন মানিক
এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, অতিরিক্ত জি.পি. ঢাকা জজ কোর্ট, ঢাকা।
বাসা ও চেম্বারঃ ১৬/৩ হাটখোলা রোড, টিকাটুলী,ঢাকা ।
স্থায়ী ঠিকানা ঃ গ্রাম- আশোয়া আমরাজুরী, থানা-কাউখালী, জেলা-পিরোজপুর
তিনি ব্যবসায়ী পিতা মরহুম মোঃ তৈয়ব আলী শরিফ ও মাতা শামসুন নাহার বেগমের ঘরে ৭ এপ্রিল ১৯৫০ সনে জন্ম গ্রহণ করেন। আল্লাহর রহমতে মাতা শামসুন নাহার বর্তমানে ১০৮ বছর বয়সেও বেঁচে আছেন। দুই ভাই ও এক বোনের মধে আরেক ভাই আবদুল ওয়াদুদ শরিফও মুক্তিযোদ্ধা। তিনি নিজ গ্রামের আশোয়া আমরাজুরী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণি পাশ করেন। বরিশাল স্বরুপকাঠি থানার অর্ন্তগত আলকীরহাট হাইস্কুল থেকে যশোরবোর্ডের অধীনে ১৯৬৭ সনে এস.এস.সি পাশ করেন। ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজ থেকে ঢাকা বোর্ডের অধীনে ’৬৮ সনে এইচ.এস.সি ১ম পর্ব ও মাদারীপুর নাজিমউদ্দিন কলেজ থেকে ’৬৯ সনে এইচ.এস.সি ২য় পর্ব পাশ করেন। জগন্নাথ কলেজ থেকে ’৭২ সনে বি.এ.ডিগ্রি ও পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামের ইতিহাসে এম.এ. ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ধানমন্ডি ল’ কলেজ থেকে ’৭৭ সনে এলএল.বি ডিগ্রি অর্জন করেন। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল থেকে ১৯৭৯ সনের ৩ ফেব্রুয়ারী আইনপেশা পরিচালনার সনদ নিয়ে ঐদিনই ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্যভূক্ত হন। ২৬ অক্টোবর ১৯৮১ সনে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আইনপেশা পরিচালনার অনুমতি প্রাপ্ত হন এবং ৭ মার্চ ১৯৮৩ সনে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্যপদ গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৮২ সনে ঢাকা ট্যাক্সেস বার এসোসিয়শনের সদস্যপদ গ্রহণ করেন ।
তিনি ১৯৮২ ও ’৮৩-৮৪ সনে দুইবার ঢাকা আইনজীবী সমিতির কার্যকরী কমিটির সদস্য, ’৮৫-৮৬ সনে সহ-সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সন থেকে ২০০১ পর্যন্ত ঢাকা জর্জ কোর্টে এ.জি.পি. হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে ২০০৯ সন থেকে ঢাকা জজ কোর্টে অতিরিক্ত জি.পি. হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
নাজিমউদ্দিন কলেজে থাকাকালীন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। সেখানে তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক ছিলেন এবং কলেজ ছাত্রসংসদের কমনরুম সম্পাদক নির্বাচিত হন। ’৭০ সনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ’৭৪ সন থেকে ’৮৮ সন পর্যন্ত বাংলাদেশ যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য। সাভার মুশুরী খোলা জামে মসজিদ কমিটির সেক্রেটারী হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
তিনি ২০০৭ সনে স্বস্ত্রীক ও ২০১৩ সনে একা হজ্বব্রত পালন করেন। এবারও ৩য় বারের মত হজ্বব্রত পালনের উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন।
তিনি ১৫ এপ্রিল ১৯৭৪ সনে পিরোজপুর শহরস্থ মরহুম মোঃ ইসহাক আলী সরদার ও মরহুম আনোয়ারা বেগমের ৪র্থ কন্যা ফিরোজা বেগমকে বিয়ে করেন। মিসেস ফিরোজা বেগম ¯œাতক ডিগ্রিধারী। তিনি এক ছেলে ও এক মেযের জনক। মেয়ে দিলরুবা আফরোজ ঢাকা মহানগর কলেজে শিক্ষকতা করছেন এবং ছেলে ডাঃ শরীফ ইসতিয়াক আহম্মেদ বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে স্কোয়ার্ডন লিডার হিসাবে কর্মরত আছেন।
তিনি মুক্তিবাহিনীতে যোগদানের উদ্দেশ্যে খুলনা যশোর হয়ে বেনাপল সীমান্ত দিয়ে ভারতে গমন করেন। সেখানে দেরাদুন ট্রেনিং ক্যাম্পে একমাসের ট্রেনিং প্রাপ্ত হয়ে যুদ্ধে যোগদানের উদ্দেশ্যে দেশে রওয়ানা দেন । সুন্দরবন সীমান্ত দিয়ে পিরোজপুর আসেন। আসার পথে সন্ধ্যা নদীতে এক মাঝি বলেন আপনাদের মধ্যে কোন মুক্তিযোদ্ধা আছেন কিনা, আছে বললে সে জানান আপনারা পারেরহাট দিয়ে নামবেন না, সেখানে রাজাকার দেলোয়ার ওরফে দেল্লা রাজাকার দলবল নিয়ে আছে। এই সেই কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাঈদী। এরপর তাঁরা ১০ মাইল ঘুরে বেকুটিয়া নামক জায়গায় নামেন। দেশে এসে তিনিসহ অন্য মুক্তিযোদ্ধারা সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়াউদ্দিনের অধীনে আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ সাহেবের মুজিব বাহিনীতে যোগদান করেন।
তাঁর মুক্তিযুদ্ধের জীবনে ১৪ নভেম্বর ১৯৭১ তারিখটি ছিল চিরস্মরণীয় । সেইদিন কাউখালি কেউন্দিয়া নামক স্থানে পাক বাহিনীর সাথে সরাসরি যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। তিনিসহ ৭ জন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন একটি বাঙ্কারে । সেই দিনের যুদ্ধে সাথী ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শৈলেন্ধ মৃধা, লতিফ, ছিদ্দিক(ছিকু) ও ফারুক শহীদ হন। আল্লাহতালার অশেষ মহিমায় তিনি সেইদিন বেঁচে যান। সেই ভয়াবহ সম্মূখ যুদ্ধে ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন ও ৮ জন পাকসেনা ও ২ জন রাজাকার নিহত হয়। এছাড়া আরো অনেক গুলো ছোট খাট যুদ্ধে তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। স্বাধীনতা পরবর্তী জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে সাড়া দিয়ে ঢাকা বঙ্গবন্ধু জাতীয় ষ্টেডিয়ামে অ¯্র জমা দেন। যুদ্ধের সময়ের আরেকটি মর্মান্তিক ঘটনা হলো চাচাতো ভাই সৈয়দুর রহমান শরিফের বড় পুত্র তৎকালীন পিরোজপুর সরকারী সোহরাওয়ার্দ্দী কলেজের ভি.পি. ও পিরোজপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ওমর ফারুক ভারত থেকে ট্রেনিং নিয়ে এসে ছদ্মবেশে বরিশাল শহরে গেলে পাকসেনারা তাঁকে আটক করে ফেলে। তারপর পাকসেনা ক্যাম্পে নিয়ে তিনদিন নির্মমভাবে নির্যাতন করে । এমনকি বর্বরোচিত কায়দায় গরম লোহার রোড মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। তার পর গুলি করে হত্যা করে। যাহা মনে পড়লে এখনো হৃদয়ে ব্যথা অনুভব হয়। বর্তমানে পিরোজপুর সদর রাস্তাটি শহীদ ওমর ফারুকের নামে করা হয়েছে।
জাতির জনকের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ তিনি সরাসরি সোহরাওয়ার্দ্দী উদ্যানে উপস্থিত থেকে শুনেছেন । জাতির জনক ‘ জয় বাংলা’ বলে বক্তব্য শেষ করেছেন তা এখনো কানে বাজে। বঙ্গবন্ধুর ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে ঢাকার জুরাইন এলাকায় প্রতিরোধ কমিটি গঠন করেন। সেই প্রতিরোধ কমিটির তিনি ছিলেন আহবায়ক। তারপর ভারতে ট্রেনিং নিতে যাওয়ার পূর্বে এলাকায় গিয়ে কাউখালী থানায় তিনিসহ অনেকে মিলে একজন পুলিশ কর্মকর্তার সহাযতায় জনতাকে ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা করেন। । বঙ্গবন্ধুর সাথে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে অনেকবার দেখা করার সুযোগ হয়েছিল। জাতির জনক প্রায় সময় আদর করে গায়ে হাত বুলিয়ে দিতেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা আওযামীলীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে গনভবনে বহুবার দেখা করার সুযোগ হয়েছে।
২০০৪ সনের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার দিন আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের ব্যানারে সভাস্থলে ছিলেন । সেইদিনের মর্মান্তিক ঘটনা মনে পড়লে এখনো হৃদয়ে বেদনা অনুভব করেন।
১৯৭৫ সনের ১৫ আগস্ট জাতির জনককে স্বপরিবারে নির্মম হত্যাকান্ডের দিন তিনি ওয়ারীর বাসায় ছিলেন । সেইদিন বিশ্বাসই করতে পারেননি যিনি দেশ স্বাধীন করলেন যার হৃদয় বাঙ্গালীর জন্য সব সময় কাদেঁ তাঁকে কিভাবে ঘাতকরা হত্যা করে। হৃদয়ের টানে বহুবার জাতির জনকের সমাধীস্থলে গিয়েছেন শ্রদ্ধা জানাতে এবং আল্লাহ চায়েত যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিনই সেখানে যাবেন ।
তিনি সৌদি আরব, ভারত, পাকিস্তান, চীন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া সফর করেছেন। আনন্দমোহন কলেজে অধ্যয়নকালীন স্কাউট ট্রেনিং-এর জন্য পাকিস্তান সফর করেন।
তিনি একজন বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা ভক্ত। আজীবন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে বেঁচে থাকতে চান। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দেখে যেতে চান। তিনি একজন সাদামাঠা স্বভাবের ধর্মভীরু আইনজীবী ।
********সাক্ষাৎকারটি ২৮ জুলাই ২০১৫ সনে গৃহিত।*******

No comments:
Post a Comment