Thursday, 5 November 2015

মরহুম এডভোকেট মোহাঃ শাহাবুদ্দীন-এর জীবনী










  মোহা: শাহাবুদ্দিন, এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট 


 এডভোকেট এ.কে.এম.আমিন উদ্দিন মানিক



তিনি ঢাকা আইনজীবী সমিতির একমাত্র  সভাপতি, যিনি সভাপতি  থাকাকালীন কোন ফৌজদারী মামলার জামিন শুনানীতে যাননি, আইন পেশায় এসে কোন সিনিয়রের অধীনে থাকেননি, আইন পেশায় সফলতার সাথে ৫০ বছর অতিক্রমকারী, রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ ই মার্চের   ভাষণ মঞ্চের কাছাকাছি থেকে শ্রবণকারী  একজন অনন্য সাধারণ, স্পষ্টবাদী,  সিভিল আইনজীবী ।************************************
সাং- কাফিলাতলী, পো: কাফিলাতলী, ১নং নর্থ হামছাদী ইউনিয়ন, থানা-সদর, জেলা- লক্ষীপুর ।**********
বর্তমানে, ৪২/এ, পশ্চিম তেজতুরী বাজার, ফার্মগেট, তেজগাঁও, ঢাকা ।***************************
পিতার নাম  মরহুম হারেস বক্স পাটোয়ারী,মাতার নাম মরহুম বদরুন্নেছা , জন্ম  স্কুলে রেজিষ্ট্রেশন অনুযায়ী  ১ জানুয়ারী ১৯৪০ খ্রীষ্টাব্দ। ৩ ভাই ও ৪ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন ৫ম ।
লক্ষীপুরের রায়পুর থানাধীন কেরোয়ায় লদুয়া মাইনর স্কুলে  ১ম শ্রেণি থেকে ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েন। লক্ষীপুর হাইস্কুলে থেকে ’৫৪ সনে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন । চাঁদপুর কলেজ থেকে ’৫৭ সনে  ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। তারপর ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্ত্তি হয়ে ’৬০ সনে ইতিহাসে অনার্স ও ’৬১ সনে এম.এ ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন । ’৬১ সনে  ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়  থেকে এলএল.বি ডিগ্রি অর্জন করেন । কর্মজীবনের শুরুতে মাস্টার্স শেষ হওয়ার পর ঢাকার সদরঘাট বাংলাবাজারে  ইস্ট-বেঙ্গল ইনস্টিটিউটে শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেন। তৎকালীন পাকিস্তান পাবলিক সার্ভিস কমিশনে পাকিস্তান ব্যুরো অব ট্যুরিজমে নির্বাহী পদে ইন্টারভিউ দিয়ে চাকুরী হয় কিন্তু ল’ কমপ্লিট হওয়ায় চাকুরীতে যোগদান করেননি। চাকুরীর ইন্টারভিউয়ের দিন জীবনের স্মরণীয ঘটনা হয়েছে বলে মনে করেন। সেইদিন মোহামেডান ল’ এর পরীক্ষা ছিল ্ বিষয়টি ইন্টারভিউ কর্তৃপক্ষকে বলার পর প্রথমে পরীক্ষা নেওয়া হয় । তাঁর মনে হয়েছে ইন্টারভিউ বোর্ডের সকলে অনেক জানে ও অনেক জ্ঞানী ছিলেন । আজও জীবনের শেষ  প্রান্তে এসে সেইদিনের অনুভূতির কথা বার বার মনে পড়ে ।
তিনি  ১৪ মে ১৯৬৪ সনে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সনদ নিয়ে  একই দিনে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্যপদ গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে  বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টে প্র্যাকটিস করার অনুমতি প্রাপ্ত হন এবং  সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্যভুক্ত হন ।  ১৯৯৪-৯৫  সনে ঢাকা আইনজীবী  সমিতির  সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন । ২০০৪-২০০৫ সনে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন । তিনি একমাত্র ব্যতিক্রম ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হয়ে কোন ফৌজদারী মামলার জামিন শুনানীতে যাননি । তিনি  বাংলাদেশ আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিাটর সদস্য । বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সকল মিটিং মিছিলে উপস্থিত থেকেছেন । রেসকোর্স ময়দানের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ ই মার্চের  ভাষণ মঞ্চের কাছাকাছি থেকে  শ্রবণ করেছেন ।  জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান  “জয় বাংলা” শ্লোগান দিয়ে বক্তব্য শেষ করেছেন তা এখনো স্পষ্ট কানে বাজে । বঙ্গবন্ধু প্রেমিক এই আইনজীবী ট্ঙ্গুীপাড়ায়  জাতির জনকের সমাধি জেয়ারতে গিয়েছেন বার বার ।
 দেশে কক্সবাজার সী-বীচ ছাড়া আর কোন দর্শনীয় জায়গায় তেমন একটা যাওয়া হয়নি   । নিজ এলাকা লক্ষীপুরের কাফিলাতলীতে মসজিদ ও এতিমখানায়  অনুদান প্রদান করেছে,  প্রতিবছর দুই ঈদের  আগে পরে  গ্রামের বাড়িতে গিয়েছেন । এলাকার  মানুষদের  সাথে মেলামেশা করেছেন ।
তিনি ২০০২ সনে হজব্রত পালন করেছেন । চিকিৎসার জন্য ও ভ্রমণে ভারতের বোম্বে, বাঙ্গালোরে, কলিকাতা, মাদ্রাজ, দিল্লী, আগ্রা, জয়পুর, আজমীর গিয়েছেন। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, নেপাল, ডুবাই সফর করেছেন।  ’৬০ সনে শিক্ষা সফরে পাকিস্তান সফর করেছেন।
তিনি  ৯ অক্টোবর  ’৬৩ সনে নোয়াখালী জেলার চাটখিল নিবাসী মরহুম আরিফুর রহমান সুধারামীর মেয়ে ফাতেহা খাতুনকে বিয়ে করেন।  মরহুম আরিফুর রহমান নেতাজী সুভাষ বসুর সাথে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন করার কারণে নামের সাথে সুধারামী যুক্ত হয়  ।
জনাব শাহাবুদ্দিন  দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক । ১. খালেদ শামসুদ্দিন (ফরহাদ) ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে বি.কম(অনার্স) এম.কম । বর্তমানে ব্যবসায়ী । বিয়ে করেছেন হোসনে আরা জাহান মিনুকে । মিনু জাহাঙ্গীর নগর বিশ^বিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স ও মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণি প্রাপ্ত । ২. আহমেদ ফখরুদ্দিন (দুলু) ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে বি.কম(অনার্স) এম.কম । বিয়ে করেছেন জুবাইদুন্নাহার নাফিসা লীনাকে , লীনা গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ থেকে বস্ত্র পরিচ্ছদ ও বয়ন শিল্পে  অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি পাশ করেছে । ৩. কামরুন্নাহার রুনু বি.এ(অনার্স) এম.এ । রুনুর স্বামী ন্যাশানাল ব্যাংকে অফিসার হিসেবে কর্মরত। 
পরিশেষে বলবো তিনি একজন সফল আইনজীবী, সারা জীবন আইনপেশায় থেকে ৫০ বছর অতিক্রম করেছেন।  মানুষজনকে একবার কথা দিলে সেই  কথা রাখার চেষ্টা করেছেন  । সবসময় ন্যায়নীতিকে পছন্দ করেছেন, অন্যায়কে প্রশ্রয় দেননি বরং যার অন্যায় করে তাদেরকে ঘৃণার চোখে দেখেছেন । পরিচ্ছন্ন , স্পষ্টবাদী একজন আইনজীবী  । ’৭৬ বছর বয়সেও  অনেকটা অসুস্থ্য শরীর নিয়ে  নিয়মিত কোর্টে আসেন । তিনি   নবীন  আইনজীবীদের  জন্য  অনুকরণীয় আদর্শবান একজন আইনজীবী ।
 সাক্ষাৎকারটি ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ গৃহিত।  
সকলকে শোক সাগরে ফেলে তিনি ৭ জুন ২০১৫ খ্রীঃ ইন্তেকাল করনে । ৮ জুন ঢাকা আইনজীবী সমিতিতে নামাজে জানাযা শেষে  তাঁকে লক্ষীপুর জেলার সদর থানাধীন ১ নং র্নথ হামছাদী ইউনিউনের  কাফিলাতলী গ্রামে দাফন করা হয়।


No comments:

Post a Comment