বীরমুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট মহিউদ্দিন আহম্মেদ
এডভোকেট এ.কে..এম.আমিন উদ্দিন(মানিক)
সাবেক যুগ্ম সচিব, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও দায়িত্বপ্রাপ্ত দায়রা জজ, তিন পার্বত্য জেলা ও বর্তমানে একজন পরিচ্ছন্ন, ন্যায়পরায়ণ আইনজীবী ।
সাং- মাজরা, পো: মাজরা, ইউনিয়ন-সাজাইল, থানা-কাশিয়ানী,জেলা- গোপালগঞ্জ । বর্তমানে, ফ্ল্যাট বি/২, ডমিনো, ৩৭/১ পুরানা পল্টন, ঢাকা । চেম্বার- সান্ধ্যকালীন ৭/৭০ গুলিস্থান শপিং কমপ্লেক্স, ৮ম তলা, ২ বঙ্গবন্ধু এ্যভিনিউ, ঢাকা-১০০০ ।
কৃষক পিতা মৃত মোঃ সাইফুদ্দিন মোল্লা ও মৃত মোসাম্মৎ জমিলা খাতুন এর ঘরে তিনি ৬ জুলাই ১৯৫১ সনে জন্ম গ্রহণ করেন । ৫ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি একমাত্র ছেলে ।
তিনি মাজরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ১ম থেকে ৫ম শ্রেণি পাশ করেন । কাশিয়ানী জি.সি. উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করে ঢাকা বোর্ডের অধীনে ১৯৬৬ সনে বিজ্ঞান বিভগে এস.এস.সি পাশ করেনে । কাশিয়ানী রামদিয়া এস.কে. কলেজ থেকে ঢাকা বোর্ডের অধীনে বাণিজ্য বিভাগে ’৬৮ সনে এইচ.এস.সি পাশ করেন । একই কলেজ থেকে ’৭০ সনে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অধীনে বি.কম. ডিগ্রি অর্জন করেন । ,৭৬ সনে খুলনা টি.টি. কলেজ থেকে বি.এড. প্রশিক্ষণ করেন ।
ডিগ্রি পরীক্ষা দেওয়ার পরই পিতার চাচার নামের প্রতিষ্ঠিত আলহাজ¦ এ.জি. উচ্চ বিদ্যালয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির অনুরোধে শিক্ষকতা শুরু করেন ।
১২ নভেম্বর ’৭০ সনে ভোলাতে প্রলংকরী ঘূর্ণিঝড় হয় । ২০ নভেম্বর জাতীয় শোক দিবস ছিল । উক্ত ২০ নভেম্বর তারিখে একজন সাবেক মন্ত্রী ও পি.ডি.বি নেতা এ.জি. স্কুল মাঠে একটি দলীয় রাজনৈতিক সভা আহবান করে । তখন তিনি নেতৃত্ব দিয়ে শোক দিবসের দিনে রাজনৈতিক সভা না করার জন্য উক্ত পি.ডি.বি. নেতাসহ তাদের সমর্থকদের অনুরোধ করেন । কথাবার্তার একপর্যায়ে উক্ত পি.ডি.বি নেতার সমর্থকরা সংঘবদ্ধ হয়ে তাঁেদরকে আক্রমণ করে । তাদের অস্্র ও লাঠিসোডাসহ আক্রমণের মূখে প্রথমে পিছু হাঁটতে বাধ্য হন । পরে স্থানীয় হাজার হাজার জনগণ তাঁদের পক্ষে যোগ দিয়ে উক্ত পি.ডি.বি নেতা ও তাদের স্থানীয দোসরদের পাল্টা দাওয়া দিতে সক্ষম হন । দাওয়া খেয়ে পি.ডি.বি নেতাসহ সাঙ্গপাঙ্গরা পালিয়ে যায় । তিনিসহ সবাই মিলে আওয়ামীলীগের বিরাট জনসভা করেন । পরের দিন তাঁদের ১৩ জনের নামে মার্শাল ল’ আইনে মামলা দায়ের করা হয় এবং তাঁেদের নামে হুলিয়া জারী করা হয় । ’৭১ সনে গোপালগঞ্জ মহকুমা আদালত থেকে জামিন নিয়ে ফরিদপুর দায়রা জজ আদালতে জামিন নিতে গেলে ১ মার্চ আদালতে হাজিরা দাখিল করার পর আইনজীবীগণ জানান যে, আজ জামিন না হওয়ার সম্ভাবনা আছে । তখন পাকিস্তান এসেম্বলি ডাকা হয়েছিল । হঠাৎ করে দুপুরে রেডিও পাকিস্তান ঘোষণা করে এসেম্বলি মূলতবী করা হয়েছে । তখন আইনজীবী ও তাঁরা পরামর্শ করে আদালতে উপস্থিত না হয়ে বাড়ি চলে যান । তারপর তাঁেদর নামে হুলিয়া জারী করা হয় ও পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় ।
তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ সন্ধ্যার পরে পার্শ্ববর্তী খাহাটে ধর্মসভায় গিয়ে ধর্মসভার এক দোকানে রেডিও এর মাধ্যমে শুনতে পেয়েছেন । জাতির জনক ”জয় বাংলা” বলে ভাষণ শেষ করেন তা এখনো স্পষ্ট মনে আছে । তখন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ মতে গ্রামে সংগ্রাম পরিষদ গঠনে সক্রিয় হন । তাঁকে কাশিয়ানী থানা সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক করা হয় । বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক নিয়ে প্রশ্ন ওঠালে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য তৎকালীন কাশিয়ানী থানা আওয়ামীলীগ সভাপতি মরহুম এ.কে.এম. আমজাদ হোসেন এবং থানা সংগ্রাম পরিষদের প্রধান কাজী আবদুল হালিম এপ্রিল মাসে মহানাগ প্রাইমারী স্কুল মাঠে এক সভা ডাকেন । উক্ত সভার আলোচনার পরে হঠাৎ করে প্রকাশ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয় । নির্বাচনে আওয়ামীলীগ-ছাত্রলীগের সংখ্যাধিক্য থাকার কারণে ছাত্রলীগের একজন নির্বাচিত হয় । পরে সবাই একত্রিত হয়ে স্থানীয়ভাবে গ্রামে-গঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের জন্য জনগণকে সংগঠিত ও উদ্বুদ্ধ করার কাজে আত্মনিয়োগ করেনে ।
২৫ মার্চ ’৭১ জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণার পর ২৬ মার্চ তাঁরা চারিদিকে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন যে, যশোর ক্যান্টনমেন্টে পাক আর্মীদের স্বাধীনতাকামী পুলিশ, বি.ডি.আর, আনসার,ও মুক্তিযোদ্ধারা ঘিরে রেখেছে, স¦াধীনতাকামীদের খাদ্য সরাবরাহের জন্য তাঁরা কয়েকজন যশোরের উদ্দেশে ২৭ মার্চ বিকালে রওয়ানা দেন । বিকালে নড়াইল পৌঁছানোর পরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দেখতে পান,অনেক অনুরোধ করে তাঁরা দুটি স্কুটার যোগে তুলারামপুর যান । যাওয়ার সময় কিছু শুকনো খাবার চিড়া, মুড়ি, বিস্কুট, সঙ্গে করে নিয়ে যান । রাত ৮ টার দিকে গাবতলী নামক জায়গায় পৌঁছান, দেখতে পান একটি লোক রাস্তার পাশে একটু দূরে টেলিফোনে রিসিভার ধরে আছে , হ্যালো বলে চিৎকার করছে , তাঁরা তার কাছে গেলে সে তাঁদের পরিচয় জানতে চাইলো । পরিচয় দেওয়ার পর তিনি জানালেন যশোর পাক আর্মীরা ঘিরে রেখেছে এবং বললেন যে, উত্তর দিকে দেখেন একটা আলো জ¦লে ওখানে আমাদের লোকজন আছে সেখানে যেতে বলেন । সেখানে যেয়ে দেখেন দশ বারোজন লোক পরীখা খুঁেড় চুলা বানিয়ে বড় বড় পাতিলে ভাত-তরকারী রান্না করছে, তারা রাতে তাঁদের খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করেন এবং রাতে সেখানে থাকতে ও কাজে সহায়তা করতে বলেন । সেখানে রাতে অবস্থান ও সহায়তা করে পরের দিন ভোরবেলায় যশোরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন । বেলা ১১ টার দিকে ছাতিয়ানতোলা নামক স্থানে গেলে জানতে পারেন যে, ছাতিয়ানতোলা জায়গায় একটি মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প আছে । সেই ক্যাম্পে যেয়েও খাবার সরাবরাহ ছাড়াও অন্যান্য সহযোগিতার প্রদান করার পদক্ষেপ দেখতে পান । তাঁরা তাদের সহযেগিতায় স্থানীয় অস্্র-পাতি নিয়ে যশোরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন । মাইল দুয়েক যাওয়ার পর রাস্তার পাশর্^বর্তী হামিদপুর উচ্চ বিদ্যালযে স্বাধীনতা বিরোধী অনেক লোককে আটকে রাখতে দেখেন । ওখান থেকে যশোর শহরে পৌঁছলে পুলিশ.বি.ডি.আরদের এ্যাম্বুশে থাকা অবস্থানে পৌঁছেন । তারা জানায় যে, অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্্র ছাড়া সেখানে থাকা ঠিক হবে না, তোমরা ফিরে যাও, সম্ভব হলে আগ্নেয়াস্্র নিয়ে আস । তখন তাঁরা এলাকায় ফিরে আসেন ।
১৩ এপ্রিল ’৭১ পাক আর্মীরা কাশিয়ানী ও ভাটিয়াপাড়ায় ট্রেনে করে প্রথম আগমন করে এবং উক্ত দিনে আওয়ামীলীগের সভাপতি এ.কে.এম. আমজাদ হোসেনের (পরবর্তীতে শ^শুর) বাড়ি ও আশেপাশের বাড়িঘর জ¦ালিয়ে দেয় । ঐদিন আক্রমণ শেষে পাক আর্মীরা ফরিদপুর চলে যায় । সপ্তাহ খানেক পরে এসে ভাটিয়াপাড়া কেন্দ্রীয় ওয়ারলেস স্থানে আর্মী ক্যাম্প স্থাপন করে । এখানে উল্লেখ্য ভাটিয়াপাড়া ও কাশিয়ানীর দূরত্ব আড়াই কিলোমিটার । তখন আমজাদ হোসেন কাশিয়ানী ইউনিয়নের দীর্ঘদিন চেয়ারম্যান ছিলেন ।
জুন মাসের শেষের দিকে তিনি, হামিদ, রব্বানী ও আরো কয়েকজন মিলে হেঁটে পাশের নড়াইল জেলার লোহাগড়ার উত্তর অঞ্চল দিয়ে, মাগুরা জেলার মোহাম্মদপুর থানার দক্ষিণ অঞ্চল, শালিখা থানার দক্ষিণ অঞ্চল, ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জ থানার দক্ষিণ অঞ্চল, মহেষপুর থানার দক্ষিণ অঞ্চল দিয়ে ভাগড়া সীমান্ত অতিক্রম করে বাস যোগে বনগাঁও যান । ভারতের চব্বিশ পরগণার বনগাঁও মহকুমার ৫নং ঢালীখোলা ক্যাম্পে রাত হয়ে যাওয়ার কারণে তাঁদেরকে গ্রহণ না করে পরের দিন সকালে আসতে বলেন । তখন তাঁরা অসহায় অবস্থায় বনগাঁও বাজারে যান । সেখানে কাশিয়ানী থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি আমজাদ হোসেনের সাথে দেখা হয় । আমজাদ হোসেন একটি খাওয়ার হোটেলে পাটী বিছিয়ে রাত্রী যাপন করার ব্যবস্থা করে দেন । পরেরদিন সকালে ৫নং ঢালীখোলা মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিং ক্যাম্পে গিয়ে ভর্ত্তি হন । কিছুদিন শারীরিক ট্রেনিং নেওয়ার পর আমজাদ হোসেন কলিকাতা দমদম এয়ারপোর্টের পূর্বপাশে কালিহাটী হাইস্কুলে একটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প খুলে পরিচালনা করেন । আমজাদ হোসেন ছিলেন ক্যাম্প ইন-চার্জ । সেখানে কিছুদিন প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর বনগাঁও ব্যারাকপুর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেওয়া হয় । সেখানকার ক্যাম্প ইন-চার্জ ছিলেন ক্যাপ্টেন আর.এন. মূখার্জী । ক্যাপ্টেন মূখার্জীর তত্ত্বাবধানে কঠিন শারীরিক প্রশিক্ষণ শেষে তাঁদেরকে অস্র প্রশিক্ষণের জন্য বীরভূম জেলার রামপুরহাট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেওয়া হয় । সেখানে ৪ সপ্তাহ প্রশিক্ষণ শেষে কল্যাণীহাট ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হয় । সেখানে কয়েকদিন থাকার পর তাঁদেরকে বসিরহাট মহকুমার টাকী ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হয় । সেখান থেকে তাঁর নেতৃত্বে ৪৩ জন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে নভেম্বর মাসে সেখানে সাতক্ষীরা জেলার দক্ষিণে কালীগঞ্জ থানা এলাকায় প্রবেশ করেন । সেখানে ৯নং সেক্টরের অধীনে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া থানার বিভিন্নযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন । তখন ৯নং সেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন মেজর আবদুল জলিল । তিনি ৪৩ জন মুক্তিযোদ্ধার কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ।্ তিনি ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে নিজ এলাকা ভাটিয়াপাড়ায় চলে আসেন এবং বিভিন্নযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে থাকেন । ডিসেম্বর মাসের ১২ তারিখে চারদিক থেকে ভাটয়াপাড়া ওয়ারলেস ক্যাম্প পাক আর্মীদের ঘেরাও করে রাখা হয় । চারপাশে মুক্তিযোদ্ধা ছিল । নড়াইল ও ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা থেকে মুক্তিযোদ্ধারা ঐ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে । ঐ যুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট সিদ্দিকীর চোখে গুলি লাগে, মালার হেমায়েতের কপালে গুলি লেগে ঘটনাস্থলে মারা যায় । রেকী করার সময় মুক্তিযোদ্ধা মুজিবর,জয়নাল মারা যায় । এছাড়া উক্তযুদ্ধে আরো অনেক মুক্তিযোদ্ধা মারা যায় । ঐ সময়ে পাক আর্মীরা এমন করে বাঙ্কার তৈরী করে অবস্থান করছিল যে তাদের আক্রমণের রেঞ্জে আনা সম্ভব হচ্ছিল না । পরিস্থিতি বুঝে মুক্তিযোদ্ধারা রণকৌশল পাল্টে ঘেরাও অবস্থায় মাইক দিয়ে বলা হয় যে, ১৬ তারিখ সারাদেশে সব পাক আর্মীরা ঐতিহাসিক তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে জেনারেল নিয়াজীর নেতৃত্বে আত্ম সমর্পণ করেছে । তাদেরকেও আত্ম সমর্পণ করারা জন্য অনুরোধ করা হয় । মাইকযোগে এই আহবানে সাড়া দিয়ে পাক আর্মীরা ১৯ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ ক্ের ।
তিনি কলেজ জীবনে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সাথে যুক্ত হন । স্বাধীনতা উত্তর গোপালগঞ্জ জেলা ন্যাশানাল আওয়ামী পার্টি ন্যাপের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন । ’৭৫ পরবর্তী আওয়ামীলীগ, ন্যাপ ও কমিউনিস্ট পার্টি সমন্বয়ে ত্রিদলীয় ঐক্যজোটের সক্রিয় সদস্য ও কাশিয়ানী থানা প্রতিনিধি ছিলেন । এই ঐক্যজোট ’৭৮ সনে প্রেসিেিডন্ট ও ’৭৯ সনের সাধারণ নির্বাচন পর্যন্ত সক্রিয় ছিল ।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান না থাকার কারণে তিনি স্কুল ত্যাগ করে চলে যান । কারণ তিনি যুদ্ধকালীন সময়ে স্কুল পরিচালনার চেষ্টা করেছিলেন এবং মহিউদ্দিন আহম্মেদ ও আতিয়ার রহমানসহ আরো কয়েকজন শিক্ষককে স্কুলে আসার জন্য নোটিশ দেন এবং না আসলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেন । স্বাধীনতা উত্তর প্রধান শিক্ষক স্কুল ত্যাগ করলে মহিউদ্দিন আহম্মেদকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয় । তখন তাঁর বয়স ছিল ২০ বৎসর মাত্র । ২০ বৎরের তরুণ হিসেবে একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নিয়ে স্কুলের উন্নয়নে সকল শ্রেণির লোকের সাথে সমন্বয় করে স্কুলকে আস্তে আস্তে উন্নতির দিকে ধাবিত করার প্রচেষ্ট করেন । ’৭৪ সনে তিনি প্রধান ীশক্ষক হিসেবে দায়িত্ব প্রাপ্ত হন । তিনি প্রধান শিক্ষক থাকাকালে স্কুলের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে সক্ষম হন ।
তিনি ’৮২ সনে বিশেষ বি.সি.এস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হয়ে বিদ্যালয ত্যাগ করে বি.সি.এস(প্রশাসন) ক্যাডারে সহকারী কমিশনার ও ম্যাজিষ্ট্রেট পদে যোগদান করেন । স্কুলের প্রধান শিক্ষক থাকাকালে ১৯৪৫ সন থেকে প্রতিষ্ঠিত হওয়া বিদ্যালয়ে ’৮২ সন পর্যন্ত ভাল ফলাফল ও বিদ্যালয়ের উন্নয়নের স্বর্ণযুগ ছিল বলে এলাকায় জনস্বীকৃত ।
তিনি ’৮৩ সনে তৎকালীন সিভিল অফিসার্স ট্রেনিং একাডেমী শাহবাগে (বর্তমান বি.সি.এস প্রশাসন একাডেমী) । ওখানে দুই মাসের প্রশিক্ষণ শেষে আগস্ট ’৮৩ সনে খুলনা ডি.সি. অফিসে যোগদান করেন । ’৮৪ সনে বাগেরহাট জেলা সৃষ্টি হওয়ার পর বাগেরহাট জেলা প্রশাসনে তাঁকে বদলী করা হয় । এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ডি.সি অফিস বাগেরহাটে যোগদান করেন । বাগেরহাট ডি.সি অফিসে সহকারী কমিশনার (সাধারণ), আর.ডি.সি, এন.ডি.সি ও ল্যান্ড এ্যাকুজিশন (ভূমি) হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন । সেখানে একনাগাড়ে ’৮৯ সন পর্যন্ত চাকুরী করেন । ’৮৯ সনের জুলাই মাাসে তাঁকে মানিকগঞ্জ ডি.সি.অফিসে ল্যান্ড এ্যাকুজিশন অফিসার হিসাবে বদলী করা হয় । ওখানে তৎকালীন সময়ে ভূমি দখলের কাজ কম থাকায় তাঁকে এন.ডি.সি এর দায়িত্ব দেওয়া হয় । ’৯১ সনের জুলাই মাসে নির্বাহী অফিসার হিসাবে ব্রাম্মণবাড়িয়ার নবীনগর থানায় বদলী করা হয় । ’৯৩ সনের সেপ্টেম্বর মাসে বাগেরহাট জেলার মংলায় নির্বাহী অফিসার হিসাবে বদলী করা হয় । ’৯৬ সনের এপ্রিল মাসে মানিকগঞ্জ সদর থানার নির্বাহী অফিসার হিসাবে বদলী করা হয় । ’৯৭ সনে জুলাই মাসে ভোলা জেলার এ.ডি.সি হিসাবে বদলী করা হয় । ভোলায় প্রথমে এ.ডি.সি (সার্বিক),এ.ডি.এম, এ.ডি.সি(রাজস্ব) হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন । ’৯৯ সনের জুলাই মাসে কুষ্টিয়া জেলার এ.ডি.সি. হিসাবে বদলী করা হয় । কুষ্টিয়াতে এ.ডি.সি(রাজস্ব) ও এ.ডি.এম. হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন । ২০০১ সনে জুলাই মাসে নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের সচিব হিসেবে বদলী করা হয় । মাত্র তিনমাস চাকুরী করার পরেই কোন কারণ ছাড়া তাঁকে মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিষদের সচিব হিসেবে বদলী করা হয় । সেখানেও তাঁর পক্ষে বেশী দিন চাকুরী করা সম্ভব হয়নি । জোট সরকারের কর্মকর্তাদের একান্ত ইচ্ছায় তাঁকে ২০০২ সনের জুলাই মাসে ও.এস.ডি. করা হয় বিনা কারণে কোন অভিযোগ না থাকা সত্বেও । ২০০৩ সনে তাঁকে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত করা হলো । বঞ্চিত করে তাঁকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি কাজকর্মহীন শাখায় বদলী করা হয় । এই সময়ে তিনি বেকার মস্তিষ্ক সচল রাখার জন্য ষ্টামফোর্ড বিশ^বিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে এম.বি. এ. কোর্স সমাপ্ত করেন । এম.বি.এ. পাশ করার পর জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের অধীনে মিরপুর ‘ল’ কলেজ থেকে ২০০৭ সনে এলএল,বি. ডিগ্রি অর্জন করেন । ২০০৫ সনে তাঁকে অনেক চড়াই-উৎরাইয়ের পরে ডিপুটি সেক্রেটারী হিসেবে প্রমোশন দেওয়া হয় এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ই.এম.ডি বিভাগে একটি প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে বদলী করা হয় । দুঃখের বিষয় ঐ প্রকল্পটি ঐ সময় থেকে তিন বছর আগে সমাপ্ত হয়ে গিয়েছে । ২০০৭ সনে ফেব্রুয়ারী মাসে তাঁকে চট্রগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার হিসাবে বদলী করা হয় । সেখানে অতিঃ বিভাগীয় কমিশন্ার (সার্বিক) হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯০০ সনের পার্ব্বত্য জেলা অধ্যাদেশের বিধান অনুসারে তিনি ৩ পার্ব্বত্য জেলার দায়রা জজের দায়িত্ব পালন করি । সততা ও নিষ্ঠার সাথে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার(চট্রগ্রাম) দায়িত্বের সাথে দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা জজের দায়িত্ব অত্যন্ত সুনামের সাথে পালন করেন ২০০৭ থেকে ২০০৮ সন পর্যন্ত । ২০০৮ সনের প্রথম দিকে যুগ্ম সচিব হিসাবে পদোন্নতি পান কিন্তু তাঁকে পূর্বোক্ত কর্মস্থলে দায়িত্ব পালনের আদেশ প্রদান করা হয় । পরবর্তীতে জুলাই ২০০৮ সন থেকে উক্ত তিন পার্ব্বত্য জেলার নিয়মিত তিনজন জেলা জজকে বদলী করা হয় । জুন ২০০৮ সনে ঢাকায় সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে বদলী করা এবং চাকুরীর বয়স শেষ হওয়ার কারণে ৫ জুলাই ২০০৮ সন থেকে অবসরকালীন ছুটি(এল.পি.আর)-এ যান । ৯ ডিসেম্বর ২০০৯ সনে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল থেকে আইনপেশা পরিচালনার সনদ প্রাপ্ত হন এবং উক্ত বছরেরই এশিয়ার বৃহত্তম আইনজীবী সমিতি ঢাকা আইনজীবীর সদস্যভূক্ত হন এবং আইনপেশায় আত্মনিয়োগ করেন । মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ২০১০ ও ২০১৪ সনের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের নির্বাচনে মহাসচিব পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন কিন্তু যোগ-বিয়োগের মারপ্যাচে পড়ে তিনি নির্বাচিত হতে পারেননি ।
তিনি কাশিয়ানী থানায় প্রধান শিক্ষক থাকাকালীন বি.আর.ডি.বি পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন । সমাজসেবা সন্ত্রণালয়ের অধীনে সমাজের বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন ।
তিনি ১৯৭৫ সনের ২০ নভেম্বর কাশিয়ানী থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি বর্তমানে মরহুম এ.কে.এম. আমজাদ হোসেনের মেজো কন্যা ওয়াহিদা আহম্মেদ (পলি) সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ।
তিনি এক ছেলে ও এক কন্যা সন্তানের জনক । ছেলে রাফাত আহম্মেদ (পাভেল) ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে অনার্সসহ এল.এল.এম (পাশ) করেন এবং বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী । তবে সরাসরি আইনপেশা পরিচালনা ন করে সি.টি. ব্যাংকের লিগ্যাল ম্যানেজার হিসাবে কাজ করেন এবং এশিয়ান ইউনিভার্সিটি , ষ্টেট ইউনিভার্সিটি ও মিলিনিয়াম ইউনিভার্সিটিতে খন্ডকালীন অধ্যাপনার দায়িত্ব পালন করছেন । সে বিবাহিত স্ত্রী মাহফুজা লীজা ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে এল.এল.বি (অনার্স) সহ এল.এল.এম.করে । ঢাকা বারের তালিকাভূক্ত আইনজীবী কিন্তু প্র্যাকটিস না করে বি.সি.এস. পাশ করে বাংলাদেশ পুলিশের সিনিয়র এ.এস.পি. হিসেবে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে কর্মরত আছেন । মেয়ে ইভানা আহম্মেদ ইলা ২০১০ সনে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে অনার্সসহ নৃ-বিজ্ঞানে প্রথম শ্রেণিতে মার্স্টাস পাশ করে । তার স্বামী ইঞ্জিনিয়ার মশিয়ুর রহমান মিয়াদ বুয়েট থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারীং পাশ করে সহসা সেন্ট্রাল ইউনভার্সিটি অব ফ্লোরিডাতে পিএইচ. ডি করার জন্য আমেরিকা যাচ্ছেন সস্ত্রীক।
তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে অপরিসীম ভালবাসেন বলে হৃদয়ের টানে বহুবার টুঙ্গিপাড়া জাতির জনকের সমাধি জেয়ারত করার জন্য গিয়েছেন । ভবিষ্যতেও আজীবন যাওয়ার ইচ্ছাপোষণ করেছেন ।
তিনি বাংলাদেশের সব দর্শণীয় জায়গা কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত, সুন্দরবন, সেন্টমার্টিন, মধু সূদন দত্তের সাগর দাঁড়ি, মুজিবনগর, দিনাজপুরের রামপুকুর,বগুড়ার মহাস্থানগড়,দিনাজপুরের স্বপ্নচ’ড়া, সিলেটের জাফলং,মৌলভি বাজারের মাধবকুন্ড ,রাঙামাটির সাজেক । বিদেশে ভারত ও মালয়েশিয়া সফর করেছেন ।
তাঁর ছোটখাটো ম্যাগাজিনে লিখার অভ্যাস আছে । ফুটবল ও ক্রিকেট খেলা পছন্দ করেন । ট্রেনিস ও ব্যাডমিন্টন খেলতে পছন্দ করেন । অবসরে গান শুনে ও টি.ভি দেখে সময় কাটে ।
রাজনীতিতে তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শক্তিকে সবসময় পছন্দ করে আসছেন এবং আজীবন পছন্দ করে যাবেন । রাজাকারদের বিচার দেখে যাতে পারছেন বলে মনে শান্তি পাচ্ছেন, বাকীদের বিচার দেখে যেতে চান । পেট্রোল বোমা মেরে যারা নিরীহ মানুষ হত্যা করেছে তাদের বিচার দেখতে চান । মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির সভা-সমাবেশে যোগদানে স্বচ্ছন্দ্যবোধ করেন ।
তিনি ক্ষোভের সাথে জানালেন সরকারের উপসচিব ও যুগ্মসচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করলেও বি.এন.পি-জামায়াত জোটের সূক্ষè মারপ্যাচে সচিবালযে ও ঢাকার কোন প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পাননি শুধুমাত্র একজন মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করার কারণে ।
তিনি ’৭০ সনের নির্বাচনের পরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সরাসরি দেখা করার সুযোগ পেয়েছিলেন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসভবনে । জাতির জনকের বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রতি আকৃষ্ট ও শ্রদ্ধাশীল । মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পছন্দ করেন । গোপালগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে শেখ হাসিনার সাথে বহুবার দেখা করার সুযোগ পেয়েছেন । সব সময় শেখ হাসিনার সভা-সমিতিতে যোগদান করেছেন ।
তিনি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে লালন করে চলেছেন । সততার সাথে জীবন কাটিয়েছেন । বাকী জীবনও একই ভাবে কাটাতে চান ।
সাক্ষাৎকারটি ১২ এপ্রিল ২০১৫ সনে গৃহিত ।

No comments:
Post a Comment