Sunday, 8 November 2015

বীরমুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট মোঃ মহিউদ্দিন দেওয়ানের জীবনী
















মো. মহিউদ্দিন দেওয়ান , এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট





এডভোকেট এ.কে.এম.আমিন ‍উদ্দিন (মানিক)


*
একজন মুক্তিযোদ্ধা, বাংলাদেশ আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির ট্রেজারার ও ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের ৫ম আদালতের অতি.পি.পি, একজন ন্যায়পরায়ণ আইনজীবী ।******************************
জন্ম ১৫ অক্টোবর ১৯৫৫ খ্রী. । পিতার নাম মৃত মো. সৈজদ্দিন দেওয়ান ছিলেন একজন সরকারী চাকুরীজীবী, স্বাস্থ্য বিভাগে র্ফামাসিষ্ট হিসাবে কর্মরত ছিলেন । মাতা মনোয়ারা বেগম ছিলেন একজন গৃহিণী । ৪ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে তিনি সবার বড় । গ্রামের বাড়ি চরমাধবপুর, ডাকঘর চান্দহর , থানা- সিংগাইর, জেলা- মানিকগঞ্জ । বর্তমানে বাড়ি ৬২৭. রোড় নং ৬ শাহীনবাগ, তেজগাঁ, ঢাকা । চেম্বার- ৪০৫ জওয়াহের কমপ্লেক্স, ৪র্থ তলা, ১৪ নং কোর্ট হাউজ ষ্ট্রীট, ঢাকা- ১১০০। হাইকোর্ট চেম্বার- রুম নং- ২০৯, এনেক্স ভবন, বালাদেশ সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ।
চরমাধবপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১ম থেতে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েন । জামির্তা সত্যগোবিন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পড়ে একই স্কুল থেকে ১৯৭০ সনে ঢাকা বোর্ডের অধীনে এস.এস.সি. পাশ করেন । ’৭০ সনে তৎকালীন কায়দে আজম কলেজ, বর্তমানে শহীদ সোহরাওয়ার্দ্দী কলেজে ভর্ত্তি হয়ে ’৭২ সনে এইচ.এস.সি. পাশ করেন । জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয় কলেজ বর্তমানে জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অধীনে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে সম্মানে ভর্ত্তি হন । ’৮১ সনে (রাষ্ট্রবিজ্ঞানে) অনার্স ও ’৮২ সনে এম.এস.এস(রাষ্ট্রবিজ্ঞানে) ডিগ্রি অর্জন করেন । ’৮৩ সনে ঢাকা সিটি ল’ কলেজ থেকে এল.এল.বি ডিগ্রি অর্জন করেন । ৬ অক্টোবর ’৮৫ সনে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল থেকে আইনপেশা পরিচালনার সনদ প্রাপ্ত হন । ১০ অক্টোবর ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্যপদ গ্রহণ করেন । ১৪ নভেম্বর ১৯৮৮ সনে বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আইনপেশা পরিচালনার অনুমতি প্রাপ্ত হন এবং ২২ ফেব্রুয়ারী ’৮৯ সনে বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্যভূক্ত হন ।
তিনি ’৬৯ সনে ১০ম শ্রেণিতে পড়াকালীন বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে, অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালীজাতির অধিকার আদায়ের জন্য তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তান ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যোগদান করেন । ’৬৯ সনে গণআন্দোলনের সময় সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৭১ সনে ১ মার্চ পল্টন ময়দানে ছাত্রলীগের সভায় মিছিল করে যান । সেইদিন বক্তব্য রাখেন আ.স.ম. আবদুর রব, নূরে আলম সিদ্দিকী, শাহাজাহান সিরাজ প্রমূখ ।
তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ জনসভায় উপস্থিত থেকে সরাসরি শ্রবণ করেছেন । সেইদিন মঞ্চের খুব কাছাকাছি ীছলেন । কলেজ থেকে ছাত্রলীগের মিছিল সহকারে সোহরাওয়ার্দ্দী উদ্যানে গিয়েছিলেন । বঙ্গবন্ধু “জয় বাংলা” বলে বক্তব্য শেষ করেছেন তা এখনো কানে বাজে । বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে জনগণকে স্বাধীনতারমন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ৮ মার্চ গ্রামের বাড়িতে গিয়ে সংঘটিত করার কাজে আত্মনিয়োগ করেন ।
তিনি সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে মুক্তিযুদ্ধের ২নং সেক্টরের অধীনে ঢাকা পশ্চিমের কমান্ডার ক্যাপ্টেন আবদুল হালিম চৌধুরীর অধীনে থানা কমান্ডার তবারক হোসেন লুডুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন । তখন মানিকগঞ্জে ক্যাপ্টেন আবদুল হালিম চৌধুরীর অধীনে বি.ডি. আর সদস্যদের দ্বারা সশ্রস্র গেরিলা ট্রেনিং প্রাপ্ত হন । মানিকগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল, মার্ক-৪ রাইফেল, ও ষ্ট্রেন গান, এস.এল. আর, দেশীয় বন্ধুক চালানো শিখেছিলেন ।
স্মরণীয় হলো ২৯ অক্টোবর ’৭১ সিংগাইর থানাধীন গোলাইডাঙ্গা যুদ্ধ । এটি ছিল তাঁর গ্রুপের বড় যুদ্ধ । পাকিস্তানী সৈন্যরা দুপুরের দিকে খাল দিয়ে নৌকায় যাচ্ছিল, তখন মুক্তিযোদ্ধারা খালের দুইপাড় থেকে অতর্কিত হানা দেয় । যুদ্ধে অর্ধশতাধিক পাকহানাদার নিহত হয় । প্রচুর গোলাবারুদ উদ্ধার হয় । তিনি সেই যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন ।
নভেম্বরে মানিকগঞ্জ পাকহানাদাররা ঢাকায় যাওয়ার পথে মানিকগঞ্জ শহরের কাছে মুক্তিযোদ্ধারা ওৎ পেতে থেকে ভোরের দিকে আক্রমণ করেন। আক্রমণ করে কিছুটা কনভয় ধ্বংশ করে নিরাপদে চলে যেতে সক্ষম হন । সেই যুদ্ধেও তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ করেন । এছাড়াও আরো অনেকগুলো ছোট খাটো যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছেন যুদ্ধ শেষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ’৭২ সনে ক্যাপ্টেন আবদুল হালিমের নিকট অস্র জমা দেন ।
তিনি ১৯৮৭ সনের ২৭ ফ্রেবুয়ারী ঢাকার ডেমরা থানাধীন আমুলিয়া গ্রামের মো. ফজলুল করিম সাহেবের মেয়ে ফেরদৌসী করিম রেখাকে বিয়ে করেন । মিসেস রেখা তেজগাঁও কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন । ছাত্রী থাকাকালে মিসেস রেখা স্পোর্টসম্যান ছিলেন । দৌড় প্রতিযোগিতায় অনেকগুলো মেডেল পেয়েছিলেন ।
জনাব মহিউদ্দিন এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক । ছেলে মাহামুদুল হাসান শোভন জার্মানীর মিউনিখে টেকনিক্যাল ইউনির্ভাসিটি অব মিউনিখ-এ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর উপর এম.এস. করছে । এর পূর্বে শোভন বি.এফ. শাহীন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে গোল্ডেন এ+ নিয়ে এস.এস.সি; নটরডেম কলেজ থেকে এ+ নিয়ে এইচ.এস.সি. ও ওআইসি পরিচালিত আই.ইউ.টি-গাজীপর থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ প্রথম শ্রেণিতে গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি অর্জন করেন । শোভন এখনও অবিবাহিত ।
মেয়ে আফসারা তাসনিয়া প্রিয়া বি.এফ. শাহীন স্কুল এন্ড কলেজে ৯ম শ্রেণিতে কমার্সে পড়ছে ।
তিনি বর্তমানে অতি.পি.পি. মহানগর দায়রা জজ ৫ম আদালতে কর্মরত আছেন । ইতিপূর্বে তিনি স্পেশাল প্রসিকিউটর হিসাবে বি.জি.বি দায়িত্ব পালন করেছিলেন । সেখানে তৎকালীন বি.ডি.আর বিদ্রোহের মামলাগুলো পরিচালনা করেছিলেন । তিনি মিরপুর ল’ কলেজে প্রফেসর হিসাবেও কাজ করছেন । সেখানে তিনি জুরিসপ্রুডেন্স, পেনাল কোড ও সিআর.পি.সি পড়াচ্ছেন । মিরপুর ল’ কলেজের পরিচালনা পরিষদের সদস্য । ঢাকাস্থ সিংগাইর সমিতির ২ বার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন । মানিকগঞ্জ জেলা সমিতির ৩ বার নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেছিলেন । তিনি বাংলাদেশ মহিলা সমিতির লিগ্যাল এইড বিভাগের ডাইরেক্টর হিসাবে কাজ করছেন ।
তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির ট্রেজারারের দায়িত্ব পালন করছেন । মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের কার্যকরী পরিষদের সদস্য ও সিংগাইর থানা আওয়ামীলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন । ১৯৭৫ সনের ১৫ আগস্ট জাতির জনককে সপরিবারে হত্যাকান্ডের পর সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনের সময় বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করায় সিংগাইরে তিনি সহ ১৭জনকে গ্রেফতার করা হয় । ৪ দিন সবাইকে অবর্ণনীয়ভাবে বেদম প্রহার করা হয় । প্রহারে সফর উদ্দিন ও দরবেশ আলী মারা যায় । আজও সেই মর্মান্তিক স্মৃতি বেদনা দেয় ।
তিনি ২০০৪ সনে ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউতে আওয়ামীলীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন । সেদিনের সেই বিভৎস ঘটনা দেখেছেন ।
আইনপেশার শুরুতে তিনি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের চেম্বারে জুনিয়র আইনজীবী হিসাবে কাজ শুরু করেন । পরবর্তীতে জিল্লুর রহমান জাতীয় রাজনীতিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লে সাবেক সফল স্বরাষ্টমন্ত্রী ও বালাদেশ আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সভাপতি এডভোকেট সাহারা খাতুনের জুনিয়র হিসাবে কাজ করেছেন ।
তিনি ভারতের Fortis Escorts হাসপাতালে হার্টের চিকিৎসা করান ও ভ্রমণে জন্য ভারতের কলিকাতা, দিল্লী, আগ্রা, শিমলা ও আজমীর শরিফ গিয়েছেন ।
বাংলাদেশে সুন্দরবন, দিনাজপুর, কষ্টিয়া ও সিলেট মাজারে গিয়েছেন । তিনি মেহেরপুর জেলার আম্রকানন গিয়েছেন যেখান থেকে প্রথম বাংলাদেশ সরকার শফথ গ্রহণ করেন ।
হৃদয়ের টানে জাতির জনকের সমাধিস্থল টুঙ্গীপাড়া গিয়েছেন বারবার । আজীবন সুযোগ পেলেই যাবেন সেখানে জানালেন ।
পরিশেষে বলবো তিনি একজন সহজসরল, স্পষ্টবাদী, পেশাগতজীবনে একজন স্বচ্ছ ও বিশ^স্ত ন্যায়পরায়ণ আইনজীবী ।
সাক্ষাৎকারটি নেওয়া হয়েেেছ ১৬ নভেম্বর ২০১৪ খ্রী:

No comments:

Post a Comment