এডভোকেট মো: আফাজুল হক
এডভোকেট এ.কে.এম. আমিন উদ্দিন (মানিক)
পাকহানাদার কর্তৃক গ্রামসহ বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া একজন ক্ষতিগ্রস্থ মুক্তিযোদ্ধা আইনজীবী*************
সাং- ধনতলা, পো: খোচাবাড়ি, উপজেলা- বালিয়াডাঙ্গী, জেলা- ঠাকুরগাঁও ।
বর্তমানে-২১১/২,পুরান কচুক্ষেত বাজার,থানা- ভাষাণটেক, জেলা-ঢাকা ।
চেম্বার- পিস হোম ল’ চেম্বার, ইনসাফ কমপ্লেক্স, ১নং রাজার দেউরী, রুম নং- ৩০১/১, ৩য় তলা, কোতয়ালী,ঢাকা-১১০০ ।
পিতা মরহুম বছির উদ্দিন আহমেদ ও মাতা মরহুমা আফলাতুরনেছা ।
সার্টিফিকেট অনুযায়ী জন্ম তারিখ ১৯ মার্চ ১৯৫৮ খ্রী:। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে ১৮ বছর দেখানো হয়েছিল । তিনি ধনতলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১ম থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েন । এরপর খোচাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্ত্তি হয়ে ৯ম শ্রেণিতে ওঠারপর মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি সপরিবারে ভারত চলে যান এবং গেরিলা ট্রেনিং নিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন । ’৭৩ সনে একই স্কুল থেকে রাজশাহী বোর্ডের অধীনে মানবিক বিভাগে এস.এস.সি পাশ করেন । তিনি ’৭৫ সনে ঠাকুরগাঁও রুহিতা ডিগ্রী কলেজ থেকে রাজশাহী বোর্ডের অধীনে এইচ.এস.সি পাশ করেন । ’৭৮ সনে রাজশাহী সরকারী কলেজ থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকত্তোর ডিগ্রি অর্জন করেন । ’৮২ সনে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অধীনে সেন্ট্রাল ল’ কলেজ থেকে এলএল.বি ডিগ্রি অর্জন করেন । ৬ জুন ২০০৭ বাংলাদেশ বার কাউন্সিল থেকে সনদ প্রাপ্ত হন এবং ২৪ জুন ২০০৭ এ ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্যপদ গ্রহণ করেন । চাকুরীর পাশাপাশি তিনি কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে পড়াশুনা চালিয়ে যান ।
সীমান্ত এলাকায় বাড়ি থাকার সুবাধে ’৭১ সনের এপ্রিল মাসের ১ম সপ্তাহে পুরো পরিবারসহ পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম দিনাজপুরের মাকলাভিটা নামকস্থানে আশ্রয় নেন । অত:পর গেরিলাযুদ্ধের কার্যক্রম শুরু হলে থুকুরাবাড়ি ইয়ুথ ক্যাম্প হতে ভারতের পানিগাটা নামক স্থানে গেরিলা প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয় । ৫ সপ্তাহ গেরিলাযুদ্ধেও বিভিন্ন অ¯্র ও বাস্তব বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ পদান করা হয় । প্রশিক্ষণ শেষে যুদ্ধে যোগদানের সময় থেকে অর্থাৎ ১৫ জুলাই ’৭১ সন থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিয়মিত সদস্য হিসাবে যোগদান করিয়ে যুদ্ধে পাঠানো হয় ।
প্রথমত: ৭নং সেক্টরের অধীনে গেরিলা কমান্ডার তালিবুর রহমানের অধীনে শেতাবগঞ্জ এলাকা নামক স্থানে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন । এখানে থাকাকালিন জুলাই মাসের শেষের দিকে শেতাবগঞ্জ সুগারমিল ধ্বংস ও পাকসেনাদের প্রতিরক্ষা গুহ উচ্ছেদ করার জন্য আক্রমণ করেন এবং সফল হন । ৭নং সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মরহুম মেজর নুরুজ্জামান । ৭ং সেক্টরের অধীনে ছিল তৎকালীন দিনাজপুর মহকুমা, বর্তমান বৃহত্তর রাজশাহী জেলা ও রংপুর জেলার গাইবান্ধা মহকুমা । এরপর তাঁকে ৭নং সেক্টর থেকে স্থায়ীভাবে ৬নং সেক্টরে পাঠানো হয় । আর ৬নং সেক্টর হলো বর্তমান ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলা এবং বৃহত্তর রংপুরের গাইবান্ধা ব্যতিত অন্যান্য এলাকা । তখন ৬নং সেক্টর কমান্ডার ছিল মরহুম উইং কমান্ডার এম.কে. বাশার। মরহুম বাশার পরে বিমান বাহিনীর প্রধান হিসাবে দায়িত্বে থাকালীন বিমান ক্রাশে মারা যান । তিনি ৬নং সেক্টরে থাকাকালীন পঞ্চগড় জেলার সহিত আটোয়ারী উপজেলার যোগাযোগ বিছিন্ন করার জন্য রেল লাইন উপড়ানো, টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা এবং বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন করা ছাড়াও সক্রিয়ভাবে বেশ কয়েকটি অপারেশনে অংশগ্রহণ করেন । আগষ্টের ১ম সপ্তাহে গেরিলা ট্রেনিং শেষে সদ্য প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ভারতীয় কমান্ডার ছোলেমান ইকবালের নেতৃত্বে বর্তমান ঠাকুরগাঁও জেলার লাহিড়ীহাট নামকস্থানে পাকহানাদের ঘাঁটি সম্পূর্ণ রুপে ধ্বংস করতে সক্ষম হন ।
স্মরণীয় ঘটনা হলো ’৭১ সনের ১৭ নভেম্বর আটোয়ারী থানা থেকে পঞ্চগড়গামী পাকা সড়কের উপর গাড়ীসহ পাক-হানাদারদের একটি কনভয়ে কমান্ডার আইয়ুবের নেতৃত্বে গেরিলা বাহিনী আক্রমণ করেন । সম্মূখযুদ্ধে সেইদিন ৩জন পাকসেনা নিহত হয় ।কনভয়টি পুরোপুরি ধ্বংস হয় । ৫টি অস্্র ,পাকসেনাদের ইউনিফরম ও বহু গোলাবারুদ ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হন । অস্্র, গোলাবারুদ এবং ইউনিফরম ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম দিনাজপুরের থুকুরা ইয়ুথ ক্যাম্পে জমা দেওয়া হয় এবং ঐদিনই ভারতীয় ক্যাপ্টেন শিবুরামের নিকট জানতে পারেন যে, ভারতীয় মিত্র বাহিনী ডিসেম্বরের ১ম সপ্তাহ থেকে মুক্তিযোদ্ধদের সহায়তা করে ১৫ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ স্বাধীন করার ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়েছে । ঐ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে ভারতীয় মিত্র বাহিনীর সাথে একসাথে যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত থাকতে আহবান জানানো হয়েছে ।
২০ নভেম্বর আটোয়ারী স্থানাস্ত ডুহাপাড়া নামকস্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের গোপন আস্তানায় পাকবাহিনী অতর্কিত সকাল ১০টায় আক্রমণ করলে দীর্ঘ সময়যুদ্ধের পর গেরিলা মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনাদের প্রতিহত করতে সক্ষম হন এবং তিনিসহ মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদ আশ্্রয়ে যেতে সক্ষম হন ।
৩ ডিসেম্বর ’৭১ মিত্রবাহিনীসহ মুক্তিযোদ্ধারা পঞ্চগড় এলাকা থেকে দিনাজপুরের দশমাইল এলাকা পর্যন্ত পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মূখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন । তিনিও সেইযুদ্ধে ছিলেন । পাকসেনারা অবস্থা বেগতিক দেখে দ্রুত পলায়ন করে । পরে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী পশ্চাৎ অবসারণ করে ঠাকুরগাঁয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থায়ী ঘাঁটি স্থাপন করে । ৪ ডিসেম্বর থেকে ঠাকুরগাঁও মুক্ত থাকে । ’৭২ সনে তিনিসহ ঠাকুরগাঁও জেলার সকল মুক্তিযোদ্ধা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ঠাকুরগাঁও এর সাব-সেক্টর কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার সদর উদ্দিনের নিকট অস্্র জমা দেন । সদর উদ্দিন পরবর্তীতে বিমানবাহিনীর প্রধান হন ।
দেশ স্বাধীন হলে তিনি সেনাবাহিনীতে নিয়মিতভাবে থেকে যান । স্বাধীনের পরে ১৫ জুলাই ’৭১ সন থেকে তাঁর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকুরী কাউন্ট করা হয় । ’৭৫ সনে তিনি ঠাকুরগাঁও রুহিতা ডিগ্রি কলেজ থেকে রাজশাহী বোর্ডের অধীনে এইচ.এস.সি. পাশ করেন । ’৭৮ সনে রাজশাহী সরকারী কলেজ থেকে ¯œাতক ডিগ্রি অর্জন করেন । ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অধীনে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ¯œাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন । ’৮২ সনে সেন্ট্রাল ল’ কলেজ থেকে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অধীনে এল.এল.বি ডিগ্রি অর্জন করেন । তিনি ৬ জুন ২০০৭ সনে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল থেকে আইনপেশা পরিচালনার সনদ প্রাপ্ত হন এবং ২৪ জুন ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্যপদ গ্রহণ করেন । চাকুরী করার পাশাপাশি কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে তিনি পড়াশুনা চালিয়ে যান ।
চাকুরী জীবনের প্রথমে বারবছর পদাতিক বাহিনী ও পরের ১৯ বছর সেনাবাহিনীর শিক্ষাকরে চাকুরী করেন । ২০০১ সনের ডিসেম্বর মাসে সেনা শিক্ষাকরের অনারারী ক্যাপ্টেন হিসাবে পদোন্নতি পেয়ে অবসর গ্রহণ করেন । চাকুরী কালে তিনি রংপুর , চট্রগ্রাম, বগুড়া, সৈয়দপুর, খাগড়াছড়ি, পোস্তগোলা, যশোর, ঢাকা সেনানিবাস ও মিরপুর ষ্টাফ কলেজে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন ।
তিনি ৬ ফেব্রুয়ারী ’৮৪ সনে ঠাকুরগাঁও সদর এলাকার অধিবাসী ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক মরহুম আবুল হোসেন ও মিসেস আয়েশা বেগমের মেয়ে নুরুনানাহার বেগমকে বিয়ে করেন । তিন ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি ৪র্থ । তাঁর এক ছেলে এক মেয়ে । ছেলে- মো: নাহিদ হক মিরপুর কমার্স কলেজ থেকে বালিজ্যে ¯œাতকোত্তর শিক্ষা শেষে ব্যবসারত আছে । মেয়ে-আফিফুন্নাহার আভা, ইডেন কলেজ থেকে বাণিজ্যে ¯œাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে সাউথ-ইস্ট ব্যাংক ফ্যান্টাসী কিংডম আশুলিয়া শাখায় সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত আছে । আভা বিবাহিত, স্বামী হাসান সোহেল বাণিজ্যে ¯œাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে সাভার ইপিজেটের প্রশাসনিক অফিসার হিসাবে কর্মরত আছেন ।
’৯৬ সনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসলে বগুড়া সেনানিবাসে কর্মরত থাকাকালীন জাতির জনকের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানে গেলে তিনি খুব কাছাকাছি তাঁকে দেখেন , যা তাঁর জীবনের একটি স্মরণীয় দিন । পরবর্তীতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনাকে দেখেছেন ।
তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারকে সর্বাত্বকভাবে সমর্থন করেন । বর্তমানে তিনি আইনপেশার পাশাপাশি নব্য প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ গণঅধিকার দল নামক একটি রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন । দলটি রেজিষ্টেশনের জন্য নির্বাচন অফিসে কাগজপত্র জমা দিয়েছে । এই দলের সভাপতি হলেন ব্যবসায়ী মোকারম হোসেন । দলটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দূর্ণীতিমুক্ত ও অসাম্প্রদায়িক সমাজ গঠনের লক্ষ্যে দেশ পরিচালনায় সক্রিয় অংশগ্রহণের প্রয়াসে কাজ করছে । তিনি মৌলবাদের ঘোরবিরোধী ,জামায়াতে ইসলামের অতীত কার্যক্রমকে চরমভাবে ঘৃণা করেন ।
মুক্তিযুদ্ধে তিনিসহ পুরো পরিবার যখন ভারত চলে যান তখন পাকসেনারা তাঁর ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়ডাঙ্গী থানার ধনতোলা গ্রাসের বাড়িঘরসহ পুরো গ্রাম জালিয়ে দেয় এবং অনেককে হত্যা করে । স্বাধীনের পর পরিবার এসে খালীভিটাতে ঘরদরজা করে । মা আফলাতুন্নেছা যুদ্ধকালীন ভারতের পশ্চিম দিনাজপুরের মারা যান । তখর রণক্ষেত্রে থাকার কারণে মায়ের মৃত্যু সংবাদও অনেক পরে পেয়েছিলেন ।

No comments:
Post a Comment