Sunday, 8 November 2015

মরহুম আবু নাছের চৌধুরী সাবেক সংসদ সদস্য-এর জীবনী












মরহুম আবু নাছের চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য




                                                                                       এডভোকেট এ.কে.এম. আমিন উদ্দিন (মানিক)



নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জের কৃতি সন্তান, মাটির মানুষ, বিদ্যানুরাগী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মরহুম আবু নাছের চৌধুরীর কথা এখনো মানুষের হৃদয়ে অম্লান। ভূলবে না হাজার বছরেও কোম্পানীগঞ্জবাসী।
তিনি ১৯২৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারী নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভার চরহাজারীতে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা- মরহুম আরাফের রহমান চৌধুরী, মাতা- মরহুম ফয়জুন্নেছা।
মরহুম আবু নাছের চৌধুরী নিজ গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়েন, বসুরহাট সরকারী এ.এইচ.সি. উচ্চ বিদ্যালয থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, কলিকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে ইন্টার্মিডিয়েট ও স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করার পর জেঠা মরহুম ফজলুল হক চৌধুরী তাঁকে কলিকাতা নিয়ে যান। ফজলুল হক চৌধুরী তখন কলিকাতা বন্দরের মালামাল ওঠানামা করার একমাত্র বড় কন্ট্রাক্টর ছিলেন। কলিকাতায় তাঁর দুটি বাড়িও ছিল। জেঠার অনুপ্রেরণায় আবু নাছের চৌধুরী স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ছাত্রজীবনই জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সাথে ঘনিষ্ঠ পরিচয় হয়। এছাড়া বাংলার অবিসংবাদিত নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দ্দীর সাথেও মরহুম আবু নাছের চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ পরিচয় ছিল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর মরহুম আবু নাছের চৌধুরী প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষে রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। তিনি ১৯৬০ সাল থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত চরহাজারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৭০ সালে এম.এন.এ নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহন করেন এবং সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৩ সালে নোয়াখালী-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ।
তিনি ১৯৭২ সালে নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ থানায় জাতির জনকের নামে সরকারী মুজিব কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। কোম্পানীগঞ্জ যোগিদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় এবং ১৯৯৪ সালে কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভায় আবু নাছের চৌধুরী পৌর উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়াও তিনি বহু প্রাথমিক বিদ্যালয়,মক্তব, মাদ্রাসা ও মসজিদ প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।
গরীব ও মেধাবী ছেলেমেয়েদের সাধারণ শিক্ষা ও উচ্চ শিক্ষায় সহযোগিতা,বিভিন্ন শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে আর্থিক সহযোগিতা এবং আর্তমানবতার সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য তিনি ২০০২ সালে জেবুন্নেছা-নাছের চৌধুরী ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন।
তিনি ২০১১ সালের ৭ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের লস-এঞ্জেলস সিটির সিডার সিনাই হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন(ইন্নলিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। তিনি তিন ছেলে ও দুই মেয়ের জনক। ১। গুলশান মোজাম্মেল(জেসমিন),স্বামীঃ প্রফেসর মোজাম্মেল হোসেন(জসীম), অর্থনীতিতে মাস্টার্স জনাব জসীম সাহেব মানিকপুর জুনিয়র হাইস্কুলকে হ্ইাস্কুলে রুপান্তর করেন এবং পরে সরকারী মুজিব কলেজ প্রতিষ্ঠিত হলে তাঁকে ভাইস-প্রিন্সিপল পদে নিয়োগ প্রদান করে প্রিন্সিপলের দায়িত্ব দেওয়া হয়, বর্তমানে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, স্ত্রী, ছেলেমেয়েরা আমেরিকায় বসবাসরত। ২। মরহুম জিন্নাহ চৌধুরী(জিন্নাহ), স্বপরিবারে আমেরিকায় অবস্থানকালে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁকে সেখানেই কবর দেওয়া হয় । ৩। নিক চৌধুরী(নীগার) স্বপরিবারে আমেরিকা প্রবাসী, ৪। নাজমুল চৌধুরী(নাজমুল) স্বপরিবারে আমেরিকা প্রবাসী, ৫। শামিমা হায়দার চৌধুরী (ডালিয়া), স্বামীঃ লক্ষীপুরের আবুল হাসেম সাহেব, বিশিষ্ট শিল্পপতি।
২০১১ সালের ১৮ আগস্ট তারিখে “বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে আবু নাছের চৌধুরীর মৃত্যুতে দেশ একজন প্রবীন রাজনীতিবিদ, বীরমুক্তিযোদ্ধা ও সমাজসেবক হারালো । এ সংসদ তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ, তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোক- সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সহমর্মিতা প্রকাশ করে” সর্বসম্মতিক্রমে শোক প্রস্তাব পাস করেন।
মরহুম আবু নাছের চৌধুরীর ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর নিজ নামে প্রতিষ্ঠিত আবু নাছের চৌধুরী পৌর উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে তাঁকে কবরস্থ করা হয়। সাদামাটা এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে আমার দেখার সুযোগ হয়েছিল যখন তিনি আবু নাছের চৌধুরী পৌর উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। আমি তখন বর্তমান সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রলালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের-এর সহকারী একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলাম। মরহুম আবু নাছের চৌধুরী তখন স্কুলের স্বীকৃতি, এম.পি,ও এবং স্কুল ভবন তৈরী করার জন্য আমার সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রাখছিলেন। ওবায়দুল কাদের তখন যুব.ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি মরহম আবু নাছের চৌধুরীর নিজ নামের প্রতিষ্ঠানটিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্বীকৃতি, ভবন ও এম.পি.ও করে দিয়েছিলেন। মরহুম আবু নাছের চৌধুরীর আন্তরিক ব্যবহার আজও আমার স্মৃতিতে ভাসে।
তথ্যসূত্রঃ বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ১৮ আগস্ট ২০১১ তারিখের শোক প্রস্তাব ও তাঁর জামাতা প্রফেসর মোজাম্মেল হোসেন(জসিম)। তারিখ- ১৩ জুন ২০১৫ খ্রীঃ

No comments:

Post a Comment