Sunday, 8 November 2015

বড় ভাই মরহুম আমিরুল ইসলাম খোকন-চেয়ারম্যানের জীবনী

















মরহুম আমিরুল ইসলাম খোকন চেয়ারম্যান


এডভোকেট এ.কে.এম. আমিন উদ্দিন (মানিক)

২৯ জুন আমার বড় ভাই আমিরুল ইসলাম খোকন চেয়ারম্যানের ১৪তম মৃত্যু বার্ষিকী।২০০১ সনের এই দিনে নিজ বাড়ীতে হৃদযন্ত্রে ব্যথা অনুভব করলে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি ইন্তেকাল করেন। পুরো নাম এ.কে. এম. আমিরুল ইসলাম খোকন। পিতা- মরহুম হাজী সামছল হক(অব: প্রাপ্ত মহকুমা খাদ্য নিয়ন্ত্রক), মাতা- মরহুম হাজী আমেনা খাতুন। আমরা ১০ ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়।বাবার সরকারী চাকুরীর সুবাধে তিনি চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণি,নারায়ণগঞ্জ বন্দর হাইস্কুলে ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণি ও পরে বসুরহাট এ. এইচ. সি.সরকারী মডেল হাই স্কুেল ১০ম শ্রেণিতে ভর্ত্তি হয়ে ১৯৬৯ সনে এস.এস. সি. পাশ করেন।১৯৭২ সনে চট্টগ্রাম সিটি কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পাশ করেন। এর পর চৌমুহনী এস.এ. কলেজে ডিগ্রিতে পড়েন। জাসদ ছাত্রলীগের রাজনীতির কারণে তিনি ১৯৭৪সনে ডিগ্রি পরীক্ষায় ৩ বিষয় পরীক্ষা দিয়ে আর পরীক্ষা দিতে পারেননি। পরে চট্টগ্রামে একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে কিছুদিন চাকুরী করেন।তিনি ১৯৭৭ সনে মাকছুদা সরকারী হাইস্কুলের শিক্ষক চরকাঁকড়া নিবাসী মরহুম ওবায়দুল হক মাষ্টারের মেয়ে ফয়জুন্নাহার বিউটিকে বিয়ে করেন। ভাবী তখন সরকারী মুজিব কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে পড়তেন। ভাইয়ের ৩ ছেলে,১ মেয়ে। বড় ছেলে ডা: এ.কে. এম. শহীদুল ইসলাম কিশোর, তার স্ত্রী ডা: নাজিয়া নওরীন শর্মী, বর্তমানে নিউইয়র্কের ব্রুকলীনে আছে। মেযে ডা: ইব্রাহানা ইসলাম মনি, তার স্বামী ডা: ফেরদৌস আহমেদ, কানাড়ায় ইমিগ্র্যান্ট প্রাপ্ত হয়েছে। ৩য় এ.কে. এম. আশরাফুল ইসলাম তুষার। ৪র্থ এ. কে. এম.আশফাকুল ইসলাম উসামা, নোয়াখালী সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে অনার্সে পড়ে।অত্যন্ত বন্ধু বাৎসল, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের অনেকের হৃদয়ে গাঁথা খোকন চেয়ারম্যান ১৯৭১ সনে ১৬ জন মুক্তিযোদ্ধাকে বাঁচানোর জন্য বসুরহাট হাইস্কুল থেকে সার্টিফিকেট নিয়ে ফেনীতে গিয়ে পাকহানাদার বাহিনীর কাছ থেকে ভাগ্যক্রমে আল্লাহর রহমতে বেঁচে যান।তিনি ১৯৮৪ সনে চরপার্ব্বতী ইউনিয়নে ১ম বার চেয়ারম্যান নির্বাচীত হন। আমতলীর ভাঙ্গনরোধ. আমতলী ব্রীজ নির্মান,পুরো ইউনিয়নে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কারণে তিনি নোয়াখালীর শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যান হিসেবে রাষ্টপতি কর্তৃক স্বর্ণপ্রদক প্রাপ্ত হন।১৯৮৮ সনে তিনি ২য় বারের মত চরপার্ব্বতী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।১৯৯০ সনে বসুরহাট পৌরসভা গঠিত হয়। আমাদের বাড়িসহ চরপার্ব্বতী ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা বসুরহাট পৌসভায় পড়ে গেলে তিনি পৌরসভার প্রথম প্রশাসক নিযুক্ত হন।মৃত্যুকালে তিনি বসুরহাট পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি ছিলেন।চেয়ারম্যান থাকাকালে আমদানী-রপ্তানীর ব্যবসা থাকার কারণে তিনি প্রচুর টাকা পয়সা রোজগার করেছিলেন। কোন টাকাই তিনি জমা রাখেননি। গরীব দুঃখীর মাঝে বিলিয়ে দিতেন।আমাদের বাড়িতে তখন বড় বড় অনুষ্ঠান হত।এজন্য ভাইয়ের নামে আমাদের বাড়ির নাম পুরো কোম্পানীগঞ্জ থানায় খোকন চেয়ারম্যান বাড়ি হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিতি পায়।খোকন চেয়ারম্যান নামটি তখন কোম্পানীগঞ্জ ছেড়ে পুরো নোয়াখালী জেলায় পরিচিতি পায়। মৃত্যুর আগে তিনি আমাদের এলাকার আরেক শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব মরহুম মোকারম সাহেবসহ বসুরহাট ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।কিন্তু রাজনৈতিক আক্রোশে তখন বসুরহাট ক্লাব ভেঙ্গে দেওয়া হয়। সেই সময় তিনি মানসিকভাবে প্রচন্ড আঘাত পেয়েছিলেন।মৃত্যুকালে ভাইয়ের কাছে নগদ টাকা পয়সার সংকট ছিল।এজন্য প্রচন্ড ব্লাড পেশার ও বুকে ব্লক থাকার কথা জেনেও তিনি কাকেও কিছু জানাননি ও চিকিৎসা করাননি।মৃত্যুর একদিন আগে তাঁর অত্যন্ত বিশ্বস্ত বন্ধু ও ভায়রা ভাই আমাদের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও নোযাখালী জেলা সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দীন ভাইসহ নরসিংদী ও মৃত্যুরদিন একসাথে বসুরহাট গিয়েছিলেন।২৭ জুন ২০০১ আমাদের কোম্পানীগঞ্জের আরেক নেতা আবদুল মালেক বি. এস-সিসহ ঢাকায় তিনি ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলেন। ডাক্তার ওনাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্ত্তি হতে বললেও তিনি হাতে টাকা নেই এই কারণে হাসপাতালে ভর্ত্তি হননি।কোম্পানীগঞ্জের সহঅবস্থানের রাজনীতির পুরোধা খোকন ভাইকে এখনও সকলে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। তাঁর নামে আমিরুল ইসলাম খোকন চেয়ারম্যান ফাউন্ডেশন করা হয়েছে।আমরা পুরো পরিবারের সবাই আমৃত্যু তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবো। আমরা তাঁর রুহের মাগফেরাত কামনা করছি।

No comments:

Post a Comment