বীরমুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট মোঃ মনিরুজ্জামানের জীবনীঃ
এডভেকেট,বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট, অতিরিক্ত পি.পি. ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালত । “ কে বলেরে মুজিব নেই,মুজিব সারা বাংলায় এবং এক মুজিব লোকান্তরে লক্ষ মুজিব ঘরে ঘরে, এক মুজিবের রক্ত থেকে লক্ষ মুজিব জন্ম নেবে” । আওয়ামী ঘরোনায় জনপ্রিয় এই শ্লোগান দুটির সৃষ্টিকারী । স্পষ্টবাদী, ন্যায় পরায়ণ, নির্ভীক একজন আইনজীবী।
তিনি ৩১ মার্চ ১৯৫৭ খ্রীঃ গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী থানার বেতুরিয়া ইউনিয়নের সাধুহাটি গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে ঢাকা জজকোর্টে আইন পেশায় নিয়োজিত আছেন । ব্যক্তিগত চেম্বারঃ পল্লবী প্লাজা,রোড নং-৭, সেক্টর-৭,পূরবী সিনেমা হলের পাশের্^,মিরপুর,ঢাকা-১২১৬।
পিতার নাম বীরমুক্তিযোদ্ধা মরহুম আবদুল মোতালেব মিয়া, মাতার নাম রহিমা বেগম, পিতা সেনাবাহিনীতে সুবেদার মেজর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পিতার ৮ সন্তানের মধ্যে মনিরুজ্জামান ছিলেন প্রথম সন্তান।
তিনি পুইশুর সরকারী প্রি-প্রাইমারী স্কুলে থেকে ১৯৬৭ সনে বৃত্তিসহ ৫ম শ্রেণি পাশ করেন। রামদিয়া এস.কে. হাইস্কুল থেকে ১৯৭২ সনে ঢাকা বোর্ডের অধীনে মানবিক বিভাগ নিয়ে এস.এস.সি পাশ করেন। রামদিয়া এস.কে. কলেজ থেকে ১৯৭৪ সনে এইচ.এস.সি পাশ করেন। ১৯৭৬ সনে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগে অনার্সে ভর্ত্তি হন। ১৯৭৯ সনে দর্শনে অনার্স এবং ১৯৮০ সনে দর্শনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮১ সনে ঢাকার ধানমন্ডি ল’ কলেজে এলএল.বি-তে ভর্ত্তি হন এবং ১৯৮৩ সনে এলএল.বি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি বাংলাদেশ বার কাউন্সিল থেকে ৫ অক্টোবর ১৯৮৮ সনে আইনপেশা পরিচালনার সনদ নিয়ে এশিয়ার বৃহত্তম আইনজীবী সমিতি ঢাকা আইনজীবী সমিতিতে যোগদান করেন।
তিনি ৮ম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যোগদান করেন। রামদিয়া শ্রী শশী কোমল বিদ্যাপীঠে ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। রামদিয়া এস.কে কলেজ শাখার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি রামদিয়া এস.কে কলেজে ছাত্রলীগের ব্যানারে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ভি.পি. নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সনে কাশিয়ানী থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ১৯৭৪-৭৫ সনে গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মনোনিত হন। পরবর্তীতে বাকশাল গঠন হওয়ার পর জাতীয় ছাত্রলীগের গোপালগঞ্জ জেলার ৭ সদস্যের কমিটির একজন নির্বাচিত হন।
তিনি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় সার্জেন্ট জহুরুল হক হল শাখার বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ও ১৯৭৯ সনে হল সংসদের জি.এস. নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭৬-৭৭ সনে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় আহবায়ক কমিটির সদস্য,পরে ১৯৭৮-৭৯ সনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক মনোনিত হন। ১৯৮০-৮১ সনের ছাত্রলীগের জালাল-জাহাঙ্গীর কমিটির সহ-সভাপতি মনোনিত হন। তিনি ১৯৮১ সন থেকে ১৯৮৫ সন পর্যন্ত দৈনিক বাংলার বাণীতে সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেন। তিনি যুবলীগের রাজনীতিতে যোগদান করে আমির হোসেন আমু ও শেখ ফজলুল করিম সেলিমের কমিটিতে কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ও যুগ্ম সম্পাদক এবং জাহাঙ্গীর কবির নানকের কমিটিতে প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বিশ^বিদ্যালয় কর্মসংস্থান(বিকল্প)-এর উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৮৯ সনে বাংলাদেশ শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন। তিনি বৃহত্তম ফরিদপুর আইনজীবী সমিতির উপদেষ্টা হিসেবে আছেন। বৃহত্তর মিরপুর আইনজীবী সমিতির উপদেষ্টা, প্রাক্তন ছাত্রনেতা বঙ্গবন্ধু আদর্শ বাস্তবায়ন পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক, বাংলাদেশ আওযামী ওলামালীগ কেন্দ্রীয় কমিটির পরিচালক, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আইন পেশায় তিনি ১৯৯৬ সন থেকে ২০০১ পর্যন্ত ঢাকা জজকোর্টে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড ব্লাস্টের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য । তিনি বাংলাদেশ ল’ কলেজ-এর গভর্ণিং বডির সদস্য। বাংলাদেশ লুথারিয়াম মিশন (বি.এল,এম.ডি) ও ইয়াং খৃস্টান এসোসিয়েশনের লিগ্যাল( ওয়াই.এম.সি.এ) এর আইন উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। র্যাব-১০ এর আইন কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছেন। বর্তমানে ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ২০০৯ সন থেকে অতিঃ পি.পি. হিসেবে দাযিত্ব পালন করে আসছেন।
১৯৭১ সনে ১৭ মার্চ মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নেওয়ার জন্য ভারতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। নিজ থানা কাশিয়ানী থেকে পায়ে হেঁটে তিনি সহ ১৪৩ জন নড়াইল জেলার লোহাগড়া যান। পরে হেঁটে যশোরের ঝিকর গাঁছা হয়ে বেনিয়ালী বাজার পৌঁছেন । সেখান থেকে বেনাপল সীমান্ত দিয়ে ভারতের ধনগাঁও অশোকনগর ক্যাম্পে পৌঁছান। সেখানে প্রাথমিক ট্রেনিং গ্রহণ করার পর তাঁদেরকে গোগরডাঙ্গা ক্যাম্পে পাঠানো হয়। সেখানে জেনারেল ওভানের নির্দেশনায় ২১ দিন ট্রেনিং নেওয়ার পর তাঁদেরকে পাঠানো হয় দেরাদুনের কান্দুয়া ক্যাম্পে পাঠানো হয়। কান্দুয়া ক্যাম্পে তোফায়েল আহমেদের অধীনে ট্রেনিং গ্রহণ করেন। সেখানে তিন মাস গেরিলা ট্রেনিং নিয়েছিলেন। ট্রেনিং সমাপ্তির পর সেপ্টেম্বর মাসের ৭ তারিখে যশোর হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন ১০৭ জন মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশে প্রবেশ করে সরাসরি গোপালগঞ্জ চলে যান নৌকা ও পায়ে হেঁটে। গোপালগঞ্জে গিয়ে কাওড়াকান্দি ক্যাম্পে গিয়ে মুজিব বাহিনীতে যোগদান করেন। তখন মুজিব বাহিনীর জেলা কমান্ডার ছিলেন শেখ শহীদুল ইসলামও কাশিয়ানী থানা কমান্ডার ছিলেন এ.এম. ইসমত কাদির গামা ।
তাঁর স্মরণীয় যুদ্ধ হলো অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে মধুমতী নদীর পাড়ে খুকরা ইতনা এলাকায় একটি সম্মূখ যুদ্ধ । সেই যুদ্ধে তিনি সরাসরি অংশ গ্রহণ করেছিলেন । সে দিন পাক সেনাবাহিনী তিনটি লঞ্চ যোগে গোপালগঞ্জ যাচ্ছিল। মুক্তিবাহিনীর অতর্কিত হামলায় পাক-হানাদাররা হত-বিহ্বল হযে পড়ে। সে দিন মুক্তিবাহিনী আক্রমণে পাক হানাদারদের ২টি লঞ্চ ডুবে যায় ও ৮৭ জন পাকসেনা নিহত হয়। সেই যুদ্ধে ১৭জন মুক্তিসেনা শহীদ হন। তাঁর চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীনও সেই যুদ্ধে শাহাদাৎ বরণ করেন।
এর পরের স্মরণীয় যুদ্ধ হলো ১৭ নভেম্বর রাথৈই বাজার দিয়ে লঞ্চ যোগে পাকহানাদার যাওয়ার সময় অতর্কিত আক্রমণ । সেই যুদ্ধে ৭ জন পাকসেনা নিহত হয়।
এছাড়া ভাটিয়ারা পাড়া ক্যাম্পে মুজিব বাহিনীর বিভিন্ন সময়ের আক্রমণে সরাসরি অংশ গ্রহণ করেন। ভাটিয়ারা পাড়া ক্যাম্পের যুদ্ধ ৪ জানয়ারী ১৯৭২ পর্যন্ত চলে।
মুক্তিযুদ্ধ সমাপ্তির পর বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ঢাকায় এসে পিলখানা তৎকালীন বি.ডি.ক্যাম্পে উঠেন এবং বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে অস্ত্র জমা দেন।
তিনি ১৯৭৫ সনের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সপরিবারে হত্যাকান্ডের পর মারাত্মক ভাবে মর্মাহত হয়েছিলেন । জাতির জনক ১৬ আগস্ট ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের এক কর্মসূচীতে আসার কথা ছিল। সে দিন তিনি সহ ছাত্র লীগের কেন্দ্রীয়, বিশ^বিদ্যালয় ও হল শাখার সকলে সার্জেন্ট জহুরুল হক হল শাখার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। ১৬ আগস্ট ভোর ৫ টার সময় জহুরুল হক হলে থেকে শুনতে পান ইতিহাসের সেই নির্মম,হৃদয় বিধারক হত্যাকান্ডের খবর । সেই দিন হত্যা করা হয়েছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ তাঁর স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বড় পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, ছোট পুত্র শেখ রাসেল, শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল, শেখ জামালের স্ত্রী রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাছের, শেখ ফজলুল হক মণি, মণির গর্ভবতী স্ত্রী আরজু মণি, মন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাত, আবদুর রব সেরনিয়াবাতের কন্যা বেবী, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতী শুকান্ত বাবু, বড় ভাইয়ের পুত্র সজিব সেরনিয়াবাত এবং আত্মীয় বেনতু খান। বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে সে দিন দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শহীদ হোন এস.বি অফিসার ছিদ্দিকুর রহমান, কর্ণেল জামিল, সৈনিক সৈয়দ মাহবুবুল হক।
বিশ্ব ইতিহাসের সেই নির্মম হত্যাকান্ডের সংবাদ শুনে তিনি শাহাবুদ্দিন, রউফ সিকদার, কামাল মজুমদার, শহীদ, সিরাজ, লিটু, সত্যভক্ত,গোলাপ সহ মোস্তফা মহসিন মন্টু ভাইয়ের ৩০২ নং এলিফ্যান্ট রোডের বাসার দিকে যান । বাসায় গিয়ে দেখেন মন্টু ভাই বাসায় নাই, শুনতে পান মন্টু ভাই শেখ ফজলুল হক মনির রক্তাক্ত লাশ নিয়ে তৎকালীন পি.জি হাসপাতাল বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গেইটে গেছেন। তখন তিনিও সেখানে যান । দেখেন পি.জি. হাসপাতালের গেইট খোলা হচ্ছে না। পি.জি. হাসপাতালের গেইট না খোলায় তাঁরা শেখ মনির লাশ নিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ইমার্জেন্সীতে যান। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পর দেখেন একের পর এক লাশ আসছে। লাশের মধ্যে আসে আবদুর রব সেরনিয়াবাত সহ ১৬ জনের লাশ। ঐ সময় তিনি, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোস্তফা মহসিন মন্টু, শাহাবুদ্দিন সহ কয়েকজন মেডিক্যালের ইমার্জেন্সিতে ছিলেন। এর মধ্যে শুনতে পান সেনাবাহিনী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ঘিরে ফেলেছে। তখন মন্টু ভাই শেখ ফজলুল করিম সেলিমকে নিয়ে কেরাণীগঞ্জ চলে যান। তিনি সহ সকলে অন্যান্যদের লাশ আনতে বের হন। কেরাণীগঞ্জ যাওয়ার সময় শেখ সেলিম বলে যান তোমাদের যদি কিছু করার থাকে ব্যবস্থা কর। তখন তাঁরা সকাল ৯টার দিকে জগন্নাথ হলে গিয়ে মুকুল বোস, বিজু খান, ইউনুছ, কামাল মজুমদার, শাহাবদ্দিন লিটু, সিরাজ সহ আনুমানিক ১৭ থেকে ২০ জন মধুর ক্যান্টিনে যান। মধুর ক্যান্টিনে গিয়ে ১৬ জন জীবন বাজি রেখে সপরিবারে জাতির জনকের হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে মিছিল বাহির করেন। মিছিলটি কলাভবন প্রদক্ষিণ করে নীলক্ষেত মোড়ে এসে সেনাবাহিনী কামান ও ট্যাঙ্ক দেখে নিরুপায় হয়ে যে যার নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। তখন তিনি সহ অন্যরা জহুরুল হক হলের ৩০২ নং কক্ষে গিয়ে সিদ্ধান্ত নেন, যে যার এলাকায় গিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য জনগণকে সংগঠিত করবেন।
তিনি লঞ্চে করে দুই দিনে গোপালগঞ্জ পোঁছান। সেখানে গিয়ে দেখেন গোপালগঞ্জ শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। তখন তিনি, লুৎফুর রহমান বাচ্চু(বর্তমানে উপজেলা চেয়ারম্যান),হারুন, আক্কাস, ইউসুফ,রউফ সিকদার,মুরাদ ভাই সহ বঙ্গবন্ধুর একটি ছবি সংগ্রহ করে গোপালগঞ্জ কোর্ট-কাছারীর পাশে বঙ্গবন্ধুর নিজস্ব খালী বাড়িতে ১৯ আগস্ট ১৯৭৫ সনে রাত ১২টা ১ মিনিটের সময় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ছবিতে হাত ছুঁয়ে নিজেদের জীবন বাজী রেখে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য শপথ গ্রহণ করেন। তিনিই প্রথম শ্লোগান ধরেন “ কে বলেরে মুজিব নেই,মুজিব সারা বাংলায়” এবং এক মুজিব লোকান্তরে লক্ষ মুজিব ঘরে ঘরে, এক মুজিবের রক্ত থেকে লক্ষ মুজিব জন্ম নেবে”। এই শ্লোগান দুটি ক্রমান্বয়ে মুজিব হত্যার বিচারের জন্য সারা বাংলায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এক কথায় আজও বঙ্গবন্ধু অনুসারীদের কাছে জনপ্রিয় এই শ্লোগান দুটির সৃষ্টিকারী মোঃ মনিরুজ্জামান। উক্ত শপথ ও শ্লোগানের পর সকলে যে যার থানা এলাকায় চলে যান। তিনি তাঁর এলাকা কাশীয়ানী চলে যান। কাশিয়ানীতে তিনি মুজিব বাহিনীর তৎকালীন প্রধান ইদ্রিস ভাই, সিরাজুল হক মিয়া, মোঃ মোক্তার হোসেন(বর্তমান কাশিয়ানী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সহ উক্ত গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানীতে এক সপ্তাহ সংগঠিত করে পুনরায় ঢাকা জহুরুল হক হলে এসে কাজ শুরু করেন ।
তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সনের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ মঞ্চের খুব কাছে থেকে শুনেছিলেন। ডঃ জলিল সহ তিনি সে দিন জনসভায় গিয়েছিলেন। জাতির জনক “জয় বাংলা” বলে ভাষণ শেষ করেছিলেন যা আজও কানে বাজে। এখনো সেই ভাষণ শুনলে আবেগ আপ্লুত হয়ে যান।
তিনি ১৯৮৩ সনের ফেব্রুয়ারী মাসে ব্রাম্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর থানাধীন পুলিশের সাবেক ডি.আই.জি. মরহুম আবদুর রশিদের ৩য় কন্যা শাহানারা বেগমকে বিয়ে করেন। শাহানারা বেগম ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে লাইব্রেরী সাইন্সে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রিধারী এবং ওয়াই.এম.সি স্কুলে দীর্ঘ ২২ বছর প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
জনাব মনিরুজ্জামান ১ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তানের জনক। পুত্র- আশফাকুল মনির, বি.এস-সি ইঞ্জিনিয়ার এবং ফেডেক্স ইন্টারন্যাশানাল কোম্পানীতে আই.টি. প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন। আশফাকুলের স্ত্রী মিমি ইডেন কলেজ থেকে গার্হস্থ্য বিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রিধারী এবং দুটিতেই প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকারীণী।
কন্যা- ফারজানা জামান মিথীলা, ব্র্যাক বিশ^বিদ্যালয়ে আইন বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্রী। মিথিলা বিবাহিতা ও তার স্বামী ডাঃ এস.এম. আর.কে.শামীম। ডাঃ শামীম বর্তমানে ইব্রাহিম মেমোরিয়াল হাসপাতাল(বারডেমে) কর্মরত আছে।
জনাব মনিরুজ্জামান ভারত, সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, মালয়েশিয়া সফর করেছেন। বাংলাদেশে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, সুন্দরবন, সিলেটের জাফলংসহ ছাত্রলীগের রাজনীতির সুবাদে সারাদেশ সফর করেছেন। হৃদয়ের টানে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ১৯৭৬ সন থেকে বার বার গিয়েছেন এবং আজীবন সেখানে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর মাজার জেয়ারতের ইচ্ছা আছে।
তিনি একজন ন্যায়পরায়ণ,স্পষ্টবাদী, নির্ভীক আইনজীবী ।
সাক্ষাৎকারটি ৭ ডিসেম্বর ২০১৫ খ্রীঃ গৃহিত । গ্রহণে- এডভোকেট এ.কে.এম. আমিন উদ্দিন (মানিক), সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ,ঢাকা বার শাখা ।
এডভেকেট,বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট, অতিরিক্ত পি.পি. ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালত । “ কে বলেরে মুজিব নেই,মুজিব সারা বাংলায় এবং এক মুজিব লোকান্তরে লক্ষ মুজিব ঘরে ঘরে, এক মুজিবের রক্ত থেকে লক্ষ মুজিব জন্ম নেবে” । আওয়ামী ঘরোনায় জনপ্রিয় এই শ্লোগান দুটির সৃষ্টিকারী । স্পষ্টবাদী, ন্যায় পরায়ণ, নির্ভীক একজন আইনজীবী।
তিনি ৩১ মার্চ ১৯৫৭ খ্রীঃ গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী থানার বেতুরিয়া ইউনিয়নের সাধুহাটি গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে ঢাকা জজকোর্টে আইন পেশায় নিয়োজিত আছেন । ব্যক্তিগত চেম্বারঃ পল্লবী প্লাজা,রোড নং-৭, সেক্টর-৭,পূরবী সিনেমা হলের পাশের্^,মিরপুর,ঢাকা-১২১৬।
পিতার নাম বীরমুক্তিযোদ্ধা মরহুম আবদুল মোতালেব মিয়া, মাতার নাম রহিমা বেগম, পিতা সেনাবাহিনীতে সুবেদার মেজর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পিতার ৮ সন্তানের মধ্যে মনিরুজ্জামান ছিলেন প্রথম সন্তান।
তিনি পুইশুর সরকারী প্রি-প্রাইমারী স্কুলে থেকে ১৯৬৭ সনে বৃত্তিসহ ৫ম শ্রেণি পাশ করেন। রামদিয়া এস.কে. হাইস্কুল থেকে ১৯৭২ সনে ঢাকা বোর্ডের অধীনে মানবিক বিভাগ নিয়ে এস.এস.সি পাশ করেন। রামদিয়া এস.কে. কলেজ থেকে ১৯৭৪ সনে এইচ.এস.সি পাশ করেন। ১৯৭৬ সনে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগে অনার্সে ভর্ত্তি হন। ১৯৭৯ সনে দর্শনে অনার্স এবং ১৯৮০ সনে দর্শনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮১ সনে ঢাকার ধানমন্ডি ল’ কলেজে এলএল.বি-তে ভর্ত্তি হন এবং ১৯৮৩ সনে এলএল.বি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি বাংলাদেশ বার কাউন্সিল থেকে ৫ অক্টোবর ১৯৮৮ সনে আইনপেশা পরিচালনার সনদ নিয়ে এশিয়ার বৃহত্তম আইনজীবী সমিতি ঢাকা আইনজীবী সমিতিতে যোগদান করেন।
তিনি ৮ম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যোগদান করেন। রামদিয়া শ্রী শশী কোমল বিদ্যাপীঠে ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। রামদিয়া এস.কে কলেজ শাখার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি রামদিয়া এস.কে কলেজে ছাত্রলীগের ব্যানারে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ভি.পি. নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সনে কাশিয়ানী থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ১৯৭৪-৭৫ সনে গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মনোনিত হন। পরবর্তীতে বাকশাল গঠন হওয়ার পর জাতীয় ছাত্রলীগের গোপালগঞ্জ জেলার ৭ সদস্যের কমিটির একজন নির্বাচিত হন।
তিনি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় সার্জেন্ট জহুরুল হক হল শাখার বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ও ১৯৭৯ সনে হল সংসদের জি.এস. নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭৬-৭৭ সনে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় আহবায়ক কমিটির সদস্য,পরে ১৯৭৮-৭৯ সনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক মনোনিত হন। ১৯৮০-৮১ সনের ছাত্রলীগের জালাল-জাহাঙ্গীর কমিটির সহ-সভাপতি মনোনিত হন। তিনি ১৯৮১ সন থেকে ১৯৮৫ সন পর্যন্ত দৈনিক বাংলার বাণীতে সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেন। তিনি যুবলীগের রাজনীতিতে যোগদান করে আমির হোসেন আমু ও শেখ ফজলুল করিম সেলিমের কমিটিতে কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ও যুগ্ম সম্পাদক এবং জাহাঙ্গীর কবির নানকের কমিটিতে প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বিশ^বিদ্যালয় কর্মসংস্থান(বিকল্প)-এর উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৮৯ সনে বাংলাদেশ শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন। তিনি বৃহত্তম ফরিদপুর আইনজীবী সমিতির উপদেষ্টা হিসেবে আছেন। বৃহত্তর মিরপুর আইনজীবী সমিতির উপদেষ্টা, প্রাক্তন ছাত্রনেতা বঙ্গবন্ধু আদর্শ বাস্তবায়ন পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক, বাংলাদেশ আওযামী ওলামালীগ কেন্দ্রীয় কমিটির পরিচালক, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আইন পেশায় তিনি ১৯৯৬ সন থেকে ২০০১ পর্যন্ত ঢাকা জজকোর্টে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড ব্লাস্টের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য । তিনি বাংলাদেশ ল’ কলেজ-এর গভর্ণিং বডির সদস্য। বাংলাদেশ লুথারিয়াম মিশন (বি.এল,এম.ডি) ও ইয়াং খৃস্টান এসোসিয়েশনের লিগ্যাল( ওয়াই.এম.সি.এ) এর আইন উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। র্যাব-১০ এর আইন কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছেন। বর্তমানে ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ২০০৯ সন থেকে অতিঃ পি.পি. হিসেবে দাযিত্ব পালন করে আসছেন।
১৯৭১ সনে ১৭ মার্চ মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নেওয়ার জন্য ভারতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। নিজ থানা কাশিয়ানী থেকে পায়ে হেঁটে তিনি সহ ১৪৩ জন নড়াইল জেলার লোহাগড়া যান। পরে হেঁটে যশোরের ঝিকর গাঁছা হয়ে বেনিয়ালী বাজার পৌঁছেন । সেখান থেকে বেনাপল সীমান্ত দিয়ে ভারতের ধনগাঁও অশোকনগর ক্যাম্পে পৌঁছান। সেখানে প্রাথমিক ট্রেনিং গ্রহণ করার পর তাঁদেরকে গোগরডাঙ্গা ক্যাম্পে পাঠানো হয়। সেখানে জেনারেল ওভানের নির্দেশনায় ২১ দিন ট্রেনিং নেওয়ার পর তাঁদেরকে পাঠানো হয় দেরাদুনের কান্দুয়া ক্যাম্পে পাঠানো হয়। কান্দুয়া ক্যাম্পে তোফায়েল আহমেদের অধীনে ট্রেনিং গ্রহণ করেন। সেখানে তিন মাস গেরিলা ট্রেনিং নিয়েছিলেন। ট্রেনিং সমাপ্তির পর সেপ্টেম্বর মাসের ৭ তারিখে যশোর হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন ১০৭ জন মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশে প্রবেশ করে সরাসরি গোপালগঞ্জ চলে যান নৌকা ও পায়ে হেঁটে। গোপালগঞ্জে গিয়ে কাওড়াকান্দি ক্যাম্পে গিয়ে মুজিব বাহিনীতে যোগদান করেন। তখন মুজিব বাহিনীর জেলা কমান্ডার ছিলেন শেখ শহীদুল ইসলামও কাশিয়ানী থানা কমান্ডার ছিলেন এ.এম. ইসমত কাদির গামা ।
তাঁর স্মরণীয় যুদ্ধ হলো অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে মধুমতী নদীর পাড়ে খুকরা ইতনা এলাকায় একটি সম্মূখ যুদ্ধ । সেই যুদ্ধে তিনি সরাসরি অংশ গ্রহণ করেছিলেন । সে দিন পাক সেনাবাহিনী তিনটি লঞ্চ যোগে গোপালগঞ্জ যাচ্ছিল। মুক্তিবাহিনীর অতর্কিত হামলায় পাক-হানাদাররা হত-বিহ্বল হযে পড়ে। সে দিন মুক্তিবাহিনী আক্রমণে পাক হানাদারদের ২টি লঞ্চ ডুবে যায় ও ৮৭ জন পাকসেনা নিহত হয়। সেই যুদ্ধে ১৭জন মুক্তিসেনা শহীদ হন। তাঁর চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীনও সেই যুদ্ধে শাহাদাৎ বরণ করেন।
এর পরের স্মরণীয় যুদ্ধ হলো ১৭ নভেম্বর রাথৈই বাজার দিয়ে লঞ্চ যোগে পাকহানাদার যাওয়ার সময় অতর্কিত আক্রমণ । সেই যুদ্ধে ৭ জন পাকসেনা নিহত হয়।
এছাড়া ভাটিয়ারা পাড়া ক্যাম্পে মুজিব বাহিনীর বিভিন্ন সময়ের আক্রমণে সরাসরি অংশ গ্রহণ করেন। ভাটিয়ারা পাড়া ক্যাম্পের যুদ্ধ ৪ জানয়ারী ১৯৭২ পর্যন্ত চলে।
মুক্তিযুদ্ধ সমাপ্তির পর বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ঢাকায় এসে পিলখানা তৎকালীন বি.ডি.ক্যাম্পে উঠেন এবং বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে অস্ত্র জমা দেন।
তিনি ১৯৭৫ সনের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সপরিবারে হত্যাকান্ডের পর মারাত্মক ভাবে মর্মাহত হয়েছিলেন । জাতির জনক ১৬ আগস্ট ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের এক কর্মসূচীতে আসার কথা ছিল। সে দিন তিনি সহ ছাত্র লীগের কেন্দ্রীয়, বিশ^বিদ্যালয় ও হল শাখার সকলে সার্জেন্ট জহুরুল হক হল শাখার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। ১৬ আগস্ট ভোর ৫ টার সময় জহুরুল হক হলে থেকে শুনতে পান ইতিহাসের সেই নির্মম,হৃদয় বিধারক হত্যাকান্ডের খবর । সেই দিন হত্যা করা হয়েছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ তাঁর স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বড় পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, ছোট পুত্র শেখ রাসেল, শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল, শেখ জামালের স্ত্রী রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাছের, শেখ ফজলুল হক মণি, মণির গর্ভবতী স্ত্রী আরজু মণি, মন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাত, আবদুর রব সেরনিয়াবাতের কন্যা বেবী, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতী শুকান্ত বাবু, বড় ভাইয়ের পুত্র সজিব সেরনিয়াবাত এবং আত্মীয় বেনতু খান। বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে সে দিন দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শহীদ হোন এস.বি অফিসার ছিদ্দিকুর রহমান, কর্ণেল জামিল, সৈনিক সৈয়দ মাহবুবুল হক।
বিশ্ব ইতিহাসের সেই নির্মম হত্যাকান্ডের সংবাদ শুনে তিনি শাহাবুদ্দিন, রউফ সিকদার, কামাল মজুমদার, শহীদ, সিরাজ, লিটু, সত্যভক্ত,গোলাপ সহ মোস্তফা মহসিন মন্টু ভাইয়ের ৩০২ নং এলিফ্যান্ট রোডের বাসার দিকে যান । বাসায় গিয়ে দেখেন মন্টু ভাই বাসায় নাই, শুনতে পান মন্টু ভাই শেখ ফজলুল হক মনির রক্তাক্ত লাশ নিয়ে তৎকালীন পি.জি হাসপাতাল বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গেইটে গেছেন। তখন তিনিও সেখানে যান । দেখেন পি.জি. হাসপাতালের গেইট খোলা হচ্ছে না। পি.জি. হাসপাতালের গেইট না খোলায় তাঁরা শেখ মনির লাশ নিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ইমার্জেন্সীতে যান। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পর দেখেন একের পর এক লাশ আসছে। লাশের মধ্যে আসে আবদুর রব সেরনিয়াবাত সহ ১৬ জনের লাশ। ঐ সময় তিনি, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোস্তফা মহসিন মন্টু, শাহাবুদ্দিন সহ কয়েকজন মেডিক্যালের ইমার্জেন্সিতে ছিলেন। এর মধ্যে শুনতে পান সেনাবাহিনী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ঘিরে ফেলেছে। তখন মন্টু ভাই শেখ ফজলুল করিম সেলিমকে নিয়ে কেরাণীগঞ্জ চলে যান। তিনি সহ সকলে অন্যান্যদের লাশ আনতে বের হন। কেরাণীগঞ্জ যাওয়ার সময় শেখ সেলিম বলে যান তোমাদের যদি কিছু করার থাকে ব্যবস্থা কর। তখন তাঁরা সকাল ৯টার দিকে জগন্নাথ হলে গিয়ে মুকুল বোস, বিজু খান, ইউনুছ, কামাল মজুমদার, শাহাবদ্দিন লিটু, সিরাজ সহ আনুমানিক ১৭ থেকে ২০ জন মধুর ক্যান্টিনে যান। মধুর ক্যান্টিনে গিয়ে ১৬ জন জীবন বাজি রেখে সপরিবারে জাতির জনকের হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে মিছিল বাহির করেন। মিছিলটি কলাভবন প্রদক্ষিণ করে নীলক্ষেত মোড়ে এসে সেনাবাহিনী কামান ও ট্যাঙ্ক দেখে নিরুপায় হয়ে যে যার নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। তখন তিনি সহ অন্যরা জহুরুল হক হলের ৩০২ নং কক্ষে গিয়ে সিদ্ধান্ত নেন, যে যার এলাকায় গিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য জনগণকে সংগঠিত করবেন।
তিনি লঞ্চে করে দুই দিনে গোপালগঞ্জ পোঁছান। সেখানে গিয়ে দেখেন গোপালগঞ্জ শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। তখন তিনি, লুৎফুর রহমান বাচ্চু(বর্তমানে উপজেলা চেয়ারম্যান),হারুন, আক্কাস, ইউসুফ,রউফ সিকদার,মুরাদ ভাই সহ বঙ্গবন্ধুর একটি ছবি সংগ্রহ করে গোপালগঞ্জ কোর্ট-কাছারীর পাশে বঙ্গবন্ধুর নিজস্ব খালী বাড়িতে ১৯ আগস্ট ১৯৭৫ সনে রাত ১২টা ১ মিনিটের সময় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ছবিতে হাত ছুঁয়ে নিজেদের জীবন বাজী রেখে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য শপথ গ্রহণ করেন। তিনিই প্রথম শ্লোগান ধরেন “ কে বলেরে মুজিব নেই,মুজিব সারা বাংলায়” এবং এক মুজিব লোকান্তরে লক্ষ মুজিব ঘরে ঘরে, এক মুজিবের রক্ত থেকে লক্ষ মুজিব জন্ম নেবে”। এই শ্লোগান দুটি ক্রমান্বয়ে মুজিব হত্যার বিচারের জন্য সারা বাংলায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এক কথায় আজও বঙ্গবন্ধু অনুসারীদের কাছে জনপ্রিয় এই শ্লোগান দুটির সৃষ্টিকারী মোঃ মনিরুজ্জামান। উক্ত শপথ ও শ্লোগানের পর সকলে যে যার থানা এলাকায় চলে যান। তিনি তাঁর এলাকা কাশীয়ানী চলে যান। কাশিয়ানীতে তিনি মুজিব বাহিনীর তৎকালীন প্রধান ইদ্রিস ভাই, সিরাজুল হক মিয়া, মোঃ মোক্তার হোসেন(বর্তমান কাশিয়ানী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সহ উক্ত গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানীতে এক সপ্তাহ সংগঠিত করে পুনরায় ঢাকা জহুরুল হক হলে এসে কাজ শুরু করেন ।
তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সনের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ মঞ্চের খুব কাছে থেকে শুনেছিলেন। ডঃ জলিল সহ তিনি সে দিন জনসভায় গিয়েছিলেন। জাতির জনক “জয় বাংলা” বলে ভাষণ শেষ করেছিলেন যা আজও কানে বাজে। এখনো সেই ভাষণ শুনলে আবেগ আপ্লুত হয়ে যান।
তিনি ১৯৮৩ সনের ফেব্রুয়ারী মাসে ব্রাম্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর থানাধীন পুলিশের সাবেক ডি.আই.জি. মরহুম আবদুর রশিদের ৩য় কন্যা শাহানারা বেগমকে বিয়ে করেন। শাহানারা বেগম ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে লাইব্রেরী সাইন্সে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রিধারী এবং ওয়াই.এম.সি স্কুলে দীর্ঘ ২২ বছর প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
জনাব মনিরুজ্জামান ১ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তানের জনক। পুত্র- আশফাকুল মনির, বি.এস-সি ইঞ্জিনিয়ার এবং ফেডেক্স ইন্টারন্যাশানাল কোম্পানীতে আই.টি. প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন। আশফাকুলের স্ত্রী মিমি ইডেন কলেজ থেকে গার্হস্থ্য বিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রিধারী এবং দুটিতেই প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকারীণী।
কন্যা- ফারজানা জামান মিথীলা, ব্র্যাক বিশ^বিদ্যালয়ে আইন বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্রী। মিথিলা বিবাহিতা ও তার স্বামী ডাঃ এস.এম. আর.কে.শামীম। ডাঃ শামীম বর্তমানে ইব্রাহিম মেমোরিয়াল হাসপাতাল(বারডেমে) কর্মরত আছে।
জনাব মনিরুজ্জামান ভারত, সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, মালয়েশিয়া সফর করেছেন। বাংলাদেশে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, সুন্দরবন, সিলেটের জাফলংসহ ছাত্রলীগের রাজনীতির সুবাদে সারাদেশ সফর করেছেন। হৃদয়ের টানে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ১৯৭৬ সন থেকে বার বার গিয়েছেন এবং আজীবন সেখানে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর মাজার জেয়ারতের ইচ্ছা আছে।
তিনি একজন ন্যায়পরায়ণ,স্পষ্টবাদী, নির্ভীক আইনজীবী ।
সাক্ষাৎকারটি ৭ ডিসেম্বর ২০১৫ খ্রীঃ গৃহিত । গ্রহণে- এডভোকেট এ.কে.এম. আমিন উদ্দিন (মানিক), সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ,ঢাকা বার শাখা ।

No comments:
Post a Comment