Sunday, 1 November 2015

আলহাজ্ব সরদার মোহাম্মদ সুরুজ্জামান- এর জীবনী

                                     






                                
 
***** আলহাজ্ব সরদার মোহাম্মদ সুরুজ্জামান *****
                                                     
                                                   এডভোকেট এ.কে.এম. আমিন উদ্দিন (মানিক)
 
এডভোকেট,বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক,দুইবারের সভাপতি ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সাবেক রিলিফ কমিটির চেয়ারম্যান,শিক্ষানুরাগী  একজন সাদা মনের সিভিল আইনজীবী ।
তিনি ম্যাট্রিকুলেশন সার্টিফিকেট অনুযায়ী ১৯৩৭ সনের ১৯ জানুয়ারী ঢাকা জেলার সাবেক তেজগাঁও বর্তমানে  দক্ষিণ খান থানার দক্ষিণ খান ইউনিয়নের দক্ষিণ খান গ্রামের সরদার বাড়িতে  জন্ম গ্রহণ করেন। বর্তমানে,শ্যামলিমা, ৩৫/১, টিপু সুলতান রোড,ওয়ারী, ঢাকায় বসবাস করেন । কোর্ট চলাকালীন চেম্বার ১৪, কোর্ট হাউজ ষ্ট্রীট, জাওহর কমপ্লেক্স (২য় তলা)।  তাঁর পিতার নাম মরহুম আলহাজ্ব মোঃ ইদ্রিস  সরদার, মাতার নাম মরহুম আলহাজ্ব ফাতেমা বেগম। পিতা ছিলেন স্থানীয় দক্ষিণ খান এলাকার সকলের শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব্য এবং ইউনিয়ন পরিষদ ও উত্তর খান হাই স্কুলের সদস্য ছিলেন।
তিনি দক্ষিণ খান প্রাইমারী স্কুল থেকে ৫ম শ্রেনী পাশ করেন। উত্তর খান ইউনিয়ন হাই স্কুল থেকে ১৯৫২ সানে ঢাকা বোর্ডের অধীনে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। ঢাকার সিদ্দিক বাজারে অবস্থিত ঢাকা গভর্নমেন্ট কলেজ(বর্তমানে ঢাকা কলেজ) থেকে ’৫৪ সনে ইন্টার্মিডিয়েট পাশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ’৫৬ সনে ¯œাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে  ‘ল’-তে ভর্ত্তি হন। তখন কৃষি বিভাগে ল্যান্ড প্ল্যান্ট প্রোটেকশন ডিপার্টমেন্টে চাকুরী হওয়ায় ’৫৬ সনে সরকারী চাকুরীতে যোগদান করেন। তাঁকে ’৫৭ সনের এপ্রিল মাসে রংপুর জেলায় বদলী করা হয়। চাকুরীর  গন্ডীবদ্য জীবন ভালো না লাগায় তিনি সরকারী চাকুরী থেকে ইস্তফা দিয়ে ’৫৯ সনে পুনরায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ’ল-তে ভর্ত্তি হন।’৫৯-৬০ ও ৬০-৬১ সেশনে ’৬১ সনে ’ল শেষ করে তিনি ১০ সেপ্টেম্বর ১৯৬২ সনে এতিহ্যবাহী এশিয়ার বৃহত্তম আইনজীবী সমিতি ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্যপদ গ্রহণ করেন। তিনি ১০ জুন ১৯৭১ সনে বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্যপদ গ্রহণ করেন। গাজীপুর বার প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি গাজীপুর বারের সদস্যপদ গ্রহণ করেন ও গাজীপুর বারের আজীবন সদস্য।
তিনি ঢাকা আইনজীবী সমিতির ১৯৭২ সনে ট্রেজারার, ’৭৬ সনে সাধারণ সম্পাদক ও ’৮৮-’৮৯ ও ’৯৮-’৯৯ সনে দুইবার সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে গ্রুপ আসন-এ থেকে ২০০৪ সনে সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২০০৪ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত বার কাউন্সিলের রিলিফ কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি নিজ এলাকা দক্ষিণ খান ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসাবে ’৮৪ থেকে ’৮৮ সন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ’৬৯ সনে দক্ষিণ খান আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়ের সভাপতি নির্বাচিত হযে একনাগাড়ে বর্তমান সময় পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বালিকা বিদ্যালয়ে বর্তমানে  প্লেø ও নার্সারী বিভাগ খোলা হয়েছে।  তিনি নিজ নামে  ঢাকার দক্ষিণ খানে ’৯২ সনে সরদার সুরুজ্জামান ডিগ্রি মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন এবং সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। কলেজে অনার্স কোর্স চালু আছে। মাস্টার্স কোর্স খোলার  ইচ্ছা আছে। তিনি দক্ষিণ খান সরদার বাড়িতে মাদরাসাতুর রহমান আল্ আরাবিয়ার  প্রতিষ্ঠা করেন। এই মাদ্রাসায় ৪ ভাই মিলে জমি দান করেছেন । মাদ্রাসারও  সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। মাদ্রাসা ভাতিজা বখতিয়ার পরিচালনা করেন। তিনি   সরদার বাড়িতে ফাতেমাতুজ জোহরা (রাঃ) মহিলা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন এবং সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন।।  তিনি দক্ষিণ খান সরদার বাড়ি জামে মসজিদ প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেছেন। তিনি উত্তরা গাওয়াইর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন । তিনি বৃহত্তর উত্তরা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন এবং বাংলাদেশ আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ ঢাকা বার শাখার কার্যকরী কমিটির ১নং সম্মানিত সদস্য ।
তিনি ১৯৬৪ সনে ভারতের বর্ধমান জেলার মরহুম মোসলেম সাহেব ও মরহুম মায়মুনা খাতুনের মেয়ে ফরিদা জুলফিকারকে বিয়ে করেন। ফরিদা জুলফিকার  মাস্টার্স পাশ এবং তিনি সরদার সুরুজ্জামান মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন । বর্তমানে অবসর প্রাপ্ত।
তিনি এক ছেলে ও দুই মেয়ের জনক । ১। বড় মেযে রুবানা জামান মিতু, সে মাস্টার্স পাশ এবং বর্তমানে সরদার সুরুজ্জামান কলেজের অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। স্বামী  মাহমুদুর রহমান অপু একজন প্রতœত্বত্ত অধিদপ্তরের সরকারী চাকুরীজীবী। ২। শাহরিয়ার জামান শমু আমেরিকা থেকে এম.বি.এ. করে বর্তমানে নাভানা গ্রুপে কর্মরত। তার স্ত্রী ইভা জাফর মার্স্টাস ডিগ্রিধারী। ৩। রুমানা জামান রীতু,এডভোকেট। রীতু ঢাকা আইনজীবী সমিতিতে ’৯৮ সনে যোগদান করেন।২০০৩ সনে সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২০০৮-০৯ সনে লাইব্রেরী সেক্রেটারী নির্বাচিত হন।  স্বামী- বি.সি.আই.সি-এর অতিঃ চীফ  ইঞ্জিনিয়ার আখতারুজ্জামান স্বপন।
সরদার সুরুজ্জামান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, যুদ্ধের সময় বাড়ির উত্তর পূর্বকোনে মাটি খুঁড়ে বাঁশ দিয়ে বাঙ্কার সৃষ্টি করে আত্মগোপনের কথা। আরো স্মরণ করেন ’৪৭ সনে পাকিস্তান হওয়ার পর জিন্নাহ সাহেব ঢাকা এসে কুর্মিটোলায় মিটিং করেন। সেই মিটিং-এ তিনজন গিয়েছিলাম জিন্নাহ উর্দ্দু ভাষায় বক্তব্য দেওয়ায় কিছুই বুঝতে পারেননি। পরে জিন্নাহ কার্জন হলে মিটিং করে উর্দ্দুকে রাষ্ট ভাষা করার ঘোষণা দেনএবং পরে সোহরাওয়ার্দ্দী উদ্যানে  জিন্নাহ উর্দ্দু রাষ্ট্র ভাষা হবে বলে ঘোষণা দিলে ছাত্ররা প্রতিবাদ শুরু করেন । তাদের মধ্যে লম্বা ছাত্রটি সম্ভবত ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।   যা তিনি স্বচক্ষে দেখেছেন।’৭১ সনে পল্টনে ছাত্র সভায় শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
 তিনি জাতির জনকের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনার সাথে গণভবনে কয়েকবার দেখা করার সুযোগ পেয়েছিলেন।  জীবনে সংসদ সদস্য হওয়ার ইচ্ছা ছিল। রাজনৈতিক মারপ্যাচের কারণে হতে পারেননি। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে মনে হয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়াটা ভুল ছিল। আইনপেশায় থাকাটাই উচিত ছিল। তিনি ৮০ বছর বয়সেও আইনপেশায় নিয়মিত।  আইনপেশায় প্রায় ৫৩ বৎসর অতিবাহিত হচ্ছে। আইনপেশার শুরুতে সিনিয়র ছিল মরহুম এডভোকেট আবদুল্লাহ হেল বাকী। পরে সিনিয়র ছিলেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মরহুম ফকির আবদুল মান্নান।
তিনি হজ্ব পালনের কারণে  সৌদি আরব সফর করেছেন। বেড়ানো ও চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছেন।  টুঙ্গীপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি জেয়ারতে গিয়েছেন দুইবার। এছাড়া তিনি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ও সীতাকুন্ডের পাহাড়ী ঝরণা পরিদর্শন করেছেন। আইনজীবী সমিতির সদস্যদেরকে নিয়ে মেহেরপুরের মুজিবনগর সফর করেছেন।
তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীনতার স্থপতি ও ইতিহাসের মহানায়ক মনে করেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাঁর অকৃত্রিম শ্রদ্ধা বিরাজমান। তিনি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চান এবং যুদ্ধাপরাধীদের দ্রুত বিচার চান।
তিনি সারাজীবন দেওয়ানী মামলা পরিচালনা করেছেন। স্মরণীয় যে জীবনে একবার একটি ফৌজদারী মামলা তাও ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৫ ধারার মামলায় গিয়েছিলেন। মামলায় গিয়ে দেখেন অপরপক্ষের আইনজীবী তাঁর আপন ভাই। পরে আর কখনো ফৌজদারী মামলায় যাননি।

তিনি ৪ ভাই ৩ বোনের মধ্যে ৩য়। বড় ভাই মরহুম সরদার মোহাম্মদ সাইদুজ্জামান আইনজীবী ছিলেন। ২য় সরদার মোহাম্মদ নুরুজ্জামান ,ওনার একছেলে বাহারাম উদ্দিন তুষার আইনজীবী। ৩য় তিনি নিজে ও ৪র্থ সরদার মোহাম্মদ   কামালুজ্জামান টিপু সুলতান রোড়ে বসবাস করেন । ওনার দুই ছেলে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ও এক মেয়ে মেডিক্যালে পড়ছে।
ব্যক্তিগত জীবনে সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম জিল্লুর রহমানের সাথে ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানার শ্বশুর এডভোকেট এ.বি. সিদ্দিক  এর সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠতা ছিল। তিনি সরদার পরিবারের আদি পুরুষ হতে বর্তমান প্রজন্ম পর্যন্ত বংশ লতিকা প্রকাশ করেন । ১৯৯০ সন হতে প্রতি বার বছর অন্তর অন্তর এই বংশ লতিকা নতুন প্রজন্মকে অন্তভ’ক্ত করে প্রকাশ করা হয়।
তিনি আইনাঙ্গনে সবসময় প্রপার ড্রেসে চলাফেরা করেছেন। তাঁর মতে মরহুম সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট গোলাম সামদানী বলেছিলেন সবসময় আইনজীবীদের প্রপার ড্রেসে থাকা উচিত। সিনিয়র আইনজীবীর পরামর্শে তিনি তা বজায় রেখেছেন। তাঁর মতে একজন আইনজীবীর ৪টি গুণ থাকা উচিৎ । ১। কোর্টের সাথে ভাল সম্পর্ক বজায় রাখা,২। আইনজীবীদের সাথে ভাল সম্পর্ক বজায় রাখা। ৩। এসিসষ্টেন্টদের সাথে ভাল সম্পর্ক বজায় রাখা ও ৪। আইনের কথা বলে জজ সাহেবদের নিকট থেকে জোর করে আদেশ না নেওয়া।
বর্তমানে ’৮০ বছর বয়সেও তিনি অত্যন্ত সাধারণ আইনজীবীর মত নিজে পেশকারদের থেকে নথী নিয়ে দেখেশুনে ওকালতি করে থাকেন । যা সত্যিই  আইনজীবী ও আইনপেশার জন্য এক অন্যন্য সাধারণ উদাহরণ হয়ে থাকবে।
সাক্ষাৎকারটি ১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ গৃহিত।

1 comment:

  1. feeling better now. Hope! being a youngest Advocate, i shall follow his path in future

    ReplyDelete