Sunday, 8 November 2015

এস. হাসানউজ্জামান সেলিম, এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট-এর জীবনী




















                    এস. হাসানউজ্জামান সেলিম, এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট


এডভোকেট এ.কে.এম. আমিন উদ্দিন (মানিক)

একজন মুক্তিযোদ্ধা আইনজীবী, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ রেসকোর্স ময়দানে উপস্থিত থেকে সরাসরি শ্রবণকারী, মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থ একজন ন্যায়পরায়ণ, পরিছন্ন আইনজীবী ।
স্থায়ী ঠিকানা : সাং- উয়ারী, থানা- লৌহজং, জেলা- মুন্সীগঞ্জ, বর্তমানে, ১৫ গোপী মোহন বসাক লেন ( টিপু সুলতান রোড) ঢাকা । চেম্বার- অন্তরা কমপ্লেক্স, রুম নং-৩,(২য় তলা), ২৫, কোর্ট হাউজ ষ্ট্রীট, ঢাকা-১১০০ ।
পিতা- মরহুম হাজী সুজাত আলী মিয়া, সরকারী চাকুরে, ঢাকা ডি.সি. অফিসে মিনিষ্টারিয়েল ষ্টাফ ছিলেন । মাতা- মোসাম্মাৎ খোদেজা বেগম, বয়স-৮৫ বৎসর বর্তমানে সুস্থ্য আছেন ।
জনাব সেলিম সাহেবের জন্ম ২০ জুলাই ১৯৫৩ খ্রীঃ । ৩ ভাই ৪ বোনের মধ্যে তিনি সবার বড় । ঢাকার নবাবপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১ম থেকে ২য় শ্রেণি, গ্র্যাজুয়েট হাই স্কুলে ৩য় থেকে ৫ম শ্রেণি ও নারিন্দা হাই স্কুলে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েন । ’৬৯ সনে নারিন্দা হাই স্কুল থেকে এস.এস.সি পাশ করেন । জগন্নাথ কলেজ বর্তমানে জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয় থেকে ’৭২ সনে এইচ.এস.সি ও ’৭৪ সনে ডিগ্রি পাশ করেন। ’৭৯ সনে সিটি ল’ কলেজ থেকে এলএল.বি ডিগ্রি অর্জন করেন । তিনি বাংলাদেশ বার কাউন্সিল থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারী ’৮৩ সনে সনদ নিয়ে ৩ মার্চ ’৮৩ ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্যপদ গ্রহণ করেনে এবং ২৮ ফেব্রুয়ারী ’৮৬ সনে বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে প্র্যাকটিসের অনুমতি নিয়ে ৯ মার্চ ’৮৬ সনে বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্যপদ গ্রহণ করেন ।
তিনি কলেজ জীবন থেকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন । ’৬৯ সনে জগন্নাথ কলেজ ছাত্রলীগের কমনরুম সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন । তৎকালীন তুখোড় ছাত্রনেতা বর্তমানে বালিজ্য মন্ত্রী জনাব তোফায়েল আহমেদ এর বক্তব্যে উজ্জীবিত হয়ে ’৬৯ সনে সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের মিছিল আন্দোলনে সক্রীয় ভূমিকা পালন করেন । ’৭০ সনে এম.এন.এ নির্বাচনে সূত্রাপুর- কোতয়ালী এলাকায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রার্থী হলে এই এলাকার বাসিন্দা হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন । বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ রেসকোর্স ময়দানে উপস্থিত থেকে সরাসরি শ্রবণ করেন। জাতির জনক “জয় বাংলা” বলে বক্তব্য শেষ করেন এখনও তা কানে বাজে । অসহযোগ আন্দোলন চলাকালীন ওয়ারী- নবাবপুর এলাকায় ছাত্র-যুবকদের সংগঠিত করার অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন । সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা ও অবাঙ্গালীদের জানমালের নিরাপত্তা ও আন্দোলনে যাতে কোন ব্যাঘাত না হয় সেই মর্মে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন । এলাকা ভিত্তিক ডামি রাইফেলের মাধ্যমে ট্রেনিং প্রাপÍ হয়েছিলেন । জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতা ঘোষণার পর ২৭ মার্চ ’৭১ তাঁর গোপী মহন বসাক লেনের বাড়ি অবাঙ্গালীদের দ্বারা এ্যাটাক হয় ও ভাংচুর করা হয় । ঐদিনই পায়ে হেঁটে ও কতক নৌকায় করে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষা পার হয়ে মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুরের ডহরী কলমা গ্রামের মাতুতালয়ে আশ্রয় নেন । তখন গ্রাম বাসি যথেষ্ঠ সহযোগিতা করেছিলেন । মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং এর জন্য ভারত গমনের চেষ্টায় দু’বার চাঁদপুর থেকে ফেরৎ আসেন । জুন মাসে ভারত থেকে মুক্তিবাহিনী আসা শুরু করলে লৌহজং থানা কমান্ডার কাজলের নেতৃত্বে ট্রেনিং গ্রহণ ও মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন । জুলাইয়ে মুক্তিযোদ্ধা সেজে হিন্দু ও বড়লোকদের বাড়ি লুটপাটের অভিযোগে এক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাকে আটক ও বিচারে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করেন । আগষ্টে এক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুসলিম লীগ নেতা ও লৌহজং থানা শান্তি বাহিনীর চেয়ারম্যানকে কমান্ডার কাজলের নেতৃত্বে আটক করেন ।
অক্টোবরের দিকে কমান্ডার কাজল, ইকবাল, আকতার, আল-আমিন, মাসুদ,কোমল ও আরো অগণিত মুক্তিযোদ্ধাসহ গোয়ালীমান্দ্রায় ফরিদপুর গামী পাক হানাদারদের গানবোট আক্রমণ করলে সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় । মুক্তিযোদ্ধারা সেইদিন জয়লাভ করে । সেইদিনের ঘটনা এখনও চোখের সামনে ভাসে ।
সেপ্টেম্বরে তাঁর ঢাকার বাসাটি ময়মনসিংহ থেকে আসা অবাঙ্গালী কর্তৃক দখল ও মালামাল লুটপাট হয়ে যায় ।
ডিসেম্বরে পাক বাহিনীর সাথে ভারতীয় বিমান বাহিনীর যুদ্ধ শুরু হলে কেরাণীগঞ্জ ও শ্রীনগরের বোর্ডারে একটি ভারতীয বিমান বিধস্ত হয় । ভারতীয় ক্যাপ্টেন মেহেতা প্যারাস্যুটে করে উক্ত স্থানে অবতরণ করেন । তাঁকে উদ্ধার ও শ্রীনগরে নিয়ে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করেন । ক্যাপ্টেন মেহেতার ইচ্ছানুযায়ী দৈনিক জনকন্ঠের সম্পাদক আতিক উল্লাহ খান মাসুদ,জিলু, মঈন সিন্হা, কাজল, ইকবাল,ও অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধার সহায়তায় তাকে চাঁদপুর দিয়ে স্পীডবোটে করে ভারত পাঠান । আর একটি স্মৃতিময় ঘটনা হলো মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বাবার কাছ থেকে টাকা নিতে গোপনে ঢাকায় এসে ইত্তেফাকের উল্টোদিকে তখনকার জলযোগ হোটেলে ইনফরমার কর্তৃক দেখানো মতে পাঞ্জাব পুলিশ কর্তৃক পাকড়াও হওয়া থেকে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের লোকজনের সহায়তায় অল্পের জন্য বেঁচে যান ।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয় মাঠে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এম.এ.জি ওসমানির কাছে অস্র জমা দেন । এম.এ.জি ওসমানি কর্তৃক প্রদত্ত মুক্তিযোদ্ধা সনদ পেয়েছিলেন পরবর্তীতে আর কোন যোগাযোগ না করায় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল থেকে সনদ পাননি ।
বঙ্গবন্ধুর দেহরক্ষী মহিউদ্দিন ও মির্জার সহায়তায় মিন্টু রোডের বাসায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সাথে সাক্ষাতের সুযোগ হয়েছিল । বঙ্গবন্ধু আদর করে বলেছিলেন এবার দেশ গড়ো, ভাল থাক ।
১৯৭৪ সনে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলে নিহত ৭ ছাত্রলীগ নেতার মধ্যে জিন্নাহ,ইদ্রিস, বাপ্পী ও কহিনূর তাঁর বন্ধু ছিলেন । উল্লেখিত ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের নিহত হওয়ায় তিনি রাজনৈতিকভাবে বিমর্ষ হয়ে পড়েন । তিনি বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকান্ডের পর আওয়ামী লীগ বিরোধীদের দ্বারা বার বার আক্রমণের শিকার হন । অনেকটা ক্ষোভের সাথে বললেন যেই দেশে জাতির জনককে সপরিবারে হত্যা করা হয় সেই দেশে রাজনীতি করে কি হবে । বঙ্গবন্ধু প্রেমিক এই মক্তিযোদ্ধা আইনজীবী বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু, আওয়ামীলীগ ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুভ কামনায় নিবেদিত প্রাণ ।
তিনি ৮ জানুয়ারী ’৮৫ সনে লক্ষীপুর নিবাসী পরবর্তীতে নারায়নগঞ্জে বসবাসকারী ব্যবসায়ী মরহুম সিরাজ উল্যাহর মেযে হোসনে আরা চৌধুরীকে বিয়ে করেন । তিনি এক মেয়ে ও এক ছেলের জনক । ১. ডাঃ হুমায়রা হাসান (অদিতি) এম.বি.বি.এস ও তার স্বামী ডাঃ সাদ মোহাম্মদ, উভয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অনারারী মেডিক্যাল অফিসার হিসাবে কর্মরত আছে । ২. রাফিউজ্জামান নিশান , ঢাকা সিটি কলেজে কমার্সের ২য় বর্ষের ছাত্র ।
তিনি গত ৩০ বছর পূর্ব থেকে নিয়মিত রমনা পার্কে সকালবেলা হাঁটেন এবং শতায়ু অঙ্গন,রমনা, ঢাকা এর যোগ-ব্যায়াম প্রশিক্ষক ও সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি । ওয়াকার্স ফেডারেশন অব রমনার কার্য্যকরী পরিষদের সদস্য । স্কুল জীবনে ভাল ফুটবলার ছিলেন ।
তিনি নবাবপুর,টিপু সুলতান রোড,গোপি মোহন বসাক লেন ও বনগ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি, নারিন্দা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তণ ছাত্র এ্যালামনাই এসোসিয়েশনের ট্রেজারার, গোপী মোহন বসাক লেনস্থ বাগে জান্নাত মাদ্রাসা ও এতিমখানার পরিচালনা পরিষদের সদস্য, ওয়ারী মহিলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সদস্য, টিপু সুলতান রোডে বোখারী জামে মসজিদের ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন ।
আমি তাঁকে পাশাপাশি চেম্বারের কারণে খুব কাছাকাছি দেখার সুযোগ হয়েছে দীর্ঘদিন । যতই দেখেছি ততই মুগ্ধ হয়েছি তাঁর জাতির জনকের প্রতি অকুত্রিম ভালবাসার কারণে । একজন ন্যায়পরায়ণ , পরিছন্ন আইনজীবী হিসাবে তাঁকে দেখেছি । নবীন আইনজীবীদের অনুকরণীয় একজন মুক্তিযোদ্ধা আইনজীবী ।
সাক্ষাৎকারটি ১৩ অক্টোবর ২০১৪ সনে গৃহিত

No comments:

Post a Comment