পেশকার ইমরুল ইসলামের জীবনী
এডভোকেট এ.কে.এম. আমিন উদ্দিন (মানিক)
একজন পেশকার, এক অনুকরণীয় সৎ চাকুরীজীবী
ইমরুল ইসলাম, ঢাকা জজ কোর্টে বিশেষ জজ আদালত নং ১০ এর পেশকার। তার সততা,ধর্মভীরুতা এক অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। পেশকার পদটি একটি ৩য় শ্রেণির চাকুরে কিন্তু এই পদে থেকে অনেকে বেশ অর্থকড়ির মালিক বনে যান। তাদেরকে আইনজীবীগণ , আইনজীবীগণের ক্লার্কগণ বিভিন্ন অজুহাতে টাকা দিতে হয়। এক পেশকার কয়েকদিন আগে বলেছিল এই কোর্ট খরচের বিষয়টি নাকি ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসছে। অনেক সময় সদ্য বিশ^বিদ্যালয় থেকে আসা জুনিয়র আইনজীবীদের সাথে এই বিষয়ে তর্ক হয় । তারা বিষয়টি মেনে নিতে কষ্ট পায়। এই পরিস্থিতে ইমরুল ইসলাম ব্যতিক্রম। জন্ম ১ সেপ্টেম্বর ১৯৭৮ । পিতার নাম মতিয়ার রহমান মুন্সি, মাতার নাম মারিয়াম বেগম। গ্রাম- নলছিয়া, পো: নিকরাইল, থানা- ভুয়াপুর, জেলা- টাঙ্গাইল । মাকুল্লা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোপালপুর, টাঙ্গাইল থেকে ’৮৫ সনে ৫ম শ্রেণি, মমতাজ ফকির উচ্চ বিদ্যালয়, ভুয়াপুর থেকে ’৯৩ এস.এস.সি, পরে ৪ বছর মেয়াদী এগ্রিকালচার ডিপ্লোমা অর্জন করেন। ২০০৭ সনে যুব উন্নয়ন থেকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন্। ২ বছর টাঙ্গাইল হোমিও কলেজে পড়াশুনা করেন। ২০০৫ থেকে ২০০৮ পেশকারের চাকুরী হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সিরাজগঞ্জ সদরে দারুল জান্নাত দাখিল মাদ্রাসায় সহকারী শিক্ষক কৃষি হিসেবে চাকুরী করেন। ২০০৮ সনের ১৮ সেপ্টেম্বর পেশকার হিসেবে এই আদালতে যোগদান করেন। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি থেকে ইতিমধ্যে ইসলামিক ষ্টাডিজে অনার্স করেছেন। ল’ পড়ার ইচ্ছা আছে। ২২ অক্টোবর ২০১০ সনে বিয়ে করেছেন । স্ত্রী মোসাম্মাৎ শিউলি বেগম, আনন্দ মোহন কলেজ থেকে সমাজ বিজ্ঞানে অনার্স কমপ্লিট করেছে। এক মেয়ে আফিয়া আনজুম বয়স ২ বছর ও এক ছেলে ইমতিয়াজ আহমেদ বয়স ১ বছর। ইমরুল ইসলামের বাবা ছিলেন কৃষিজীবী ও ব্যবসায়ী । ৮ ভাই ও ৪ বোনের সংসারে তার অবস্থান ১১তম। তার সাথে পরিচয় ২০০৮ সনে সংসদভবনে স্থাপিত বিশেষ আদালতে। আমি তখন বর্তমান সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এর মামলা করার জন্য প্রায় প্রতিদিন বিশেষ আদালতে যাচ্ছিলাম। ইমরূল ভাইকে কখনও কোন বখশিস্ দিতে পারিনি, নকল ওঠানোর জন্য সরকারী ফিয়ের বাইরে এক টাকাও বেশী দিতে পারিনি। অথচ কাজও দ্রুত করে দিয়েছে। তখন ভেবে ছিলাম নতুন চাকুরী, আবার যৌথবাহিনীর ভয়। কিছুদিন গেলে অন্য সব পেশকারের মত হয়ে যাবে। কিন্তু তা হয়নি বরং তার নীতিতে অটল থেকে অন্যদেরকে সৎ পথে আনার চেষ্টা করছেন। ৩য় শ্রেণির চাকুরে। বেতন দিয়ে সৎ ভাবে সংসার চালানো অনেক কঠিন, তাই ২টি টিউশনি করেন। ১০নং বিশেস জজ আদালতে ষ্টেনো নেই, ক্লার্ক নেই, প্রসেস সার্ভেয়ার নেই,সব কাজই তাকে একা করতে হয়। বিনিময়ে কোন ওভার টাইম পান না অথচ ড্রাইভার অফিস শেষে ডিউটি করলে ওভার টাইম পায়। উল্লেখ্য বিশেষ জজ আদালত ১০ এর বর্তমান বিচারক মো: জাফরুল হাছান।
তার সাথে আলাপ চারিতায় বলেন গণিতের উপর তার খুব আগ্রহ। গণিতের খুঁটিনাটি বিষয়ে গবেষনা করতে সচেষ্ট আছেন। বিচার অঙ্গনে অসৎ ও অবৈধ লেনদেন গুলো দেখলে খুব খারাপ লাগে। অবৈধ ভাবে বিদ্যূৎ ব্যবহার করে আপন বড় ভাই হিটার চালালে সে বিদ্যূৎ কর্মকর্তার নিকট ধরিয়ে দেয় অথচ সেই বড় ভাইযের বাসায় থেকে পড়াশুনা করেছিল। তারমতে বড় ভাইকে পাপ কাজ থেকে সরিয়ে এনেছি।
ইমরুল ইসলাম জামায়াতের রাজনীতিকে ভন্ড রাজনীতি মনে করেন। জামায়াতে কাজ না করার অপরাধে স্থানীয় জামায়াত নেতারা তাকে একবার জে,এম.বি. বলে ধরিয়ে দেয়। পরে অবশ্য থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিরাপরাধ দেখে আধা ঘন্টা পর তাকে থানা থেকে ছেড়ে দেয়।
আমি তাকে শ্রদ্ধা জানাই তার এই সততার জন্য এবং তাকে অনুসরণ করার জন্য সবাইকে আহবান জানাই। তাহলে হয়তো জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সোনাবাংলা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন একদিন সফল হবে।

No comments:
Post a Comment