Monday, 12 June 2017

With Prime Minister Sheikh Hasina











এক অন্যরকম অনুভূতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক পেশাজীবীদের সম্মানে ১০ জুন ২০১৭ ইং শনিবার গণভবনে আয়োজিত ইফতার ও দোয়া মাহফিলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার সাথে কুশল বিনিময়কালে আমরা সালাম প্রদান করছি ।

Sunday, 30 April 2017

***মরহুম এডভোকেট মোমিন উল্লাহ ভাইয়ের সংক্ষিপ্ত জীবনী***






***মরহুম এডভোকেট মোমিন উল্লাহ ভাইয়ের সংক্ষিপ্ত জীবনী***



মরহুম এডভোকেট মোঃ মমিন উল্লাহ ছিলেন একজন সাদা মনের মানুষ ছিলেন । বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলে  অত্যন্ত সুপরিচিত, আদর্শবান ও জনদরদী মানুষ ছিলেন । জন্ম ১৯৪২ সনে নোয়াখালী জেলার সদর থানাধীন নেয়াজপুর ইউনিযনের নেয়াজপুর গ্রামে । বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বৃহত্তর নোয়াখালী জেলার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন ।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সেন্ট্রাল ল’ কলেজ থেকে এলএল.বি পাশ করে ১৯৭৬ সনে ঢাকা আইনজীবী সমিতিতে যোগদান করেন ।পরে ১৯৮৪ সনে নোয়াখালী আইনজীবী সমিতিতে সদস্যভূক্ত হয়ে নোয়াখালীতে আইনপেশা শুরু করেন । তিনি ১৯৬৯ সনে গণঅভূথ্যানে বৃহত্তর নোয়াখালী জেলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন । মুক্তিযুদ্ধে মুজিববাহিনীর বৃহত্তর নোয়াখালী জেলার ডিপুটি কমান্ডার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন ।তিনি ১৯৮৬ সন থেকে ২০০৩ পযন্ত দীর্ঘ ১৮ বছর বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নোয়াখালী জেলার সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন ।২০০৭ সনে নোয়াখালী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন । তিনি জীবদ্দশায় বহু প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে গেছেন । তিনি ভুলুয়া কলেজ, নেয়াজপুর হাই স্কুল, নেয়াজপুর হাইস্কুল সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয, ভুলুয়া কিন্ডার গার্ডেন, ভুলুয়া ফাইন্ডেশন, কাসেম বাজার, নেয়াজপুর জামে মসজিদ ও ফোরকানিয়া মাদ্রসা , কাসেম বাজার জামে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন । তিনি জেলা শহর মাইজদিতে প্রতিষ্ঠিত সার্জেন্ট জহুরুল হক ও শহীদ ওহিদুর রহমান ওদু স্মৃতি সংসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন ।তিনি চার কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন্ । ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি সবার বড় ছিলেন । তিনি দীর্ঘদিন অসুস্থ্য থেকে গত ১৫ এপ্রিল ২০১৭ ইং শনিবার সন্ধ্যা ৬.১৫ মিনিটের সময় ৭৮ বৎসর বয়সে ঢাকার বনশ্রীতে অবস্থিত ফরাজী হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন । বনশ্রী, ও নোযাখালীতে জানাযা নামাজ শেষে মরহুর এডভোকেট মোঃ মোমিন উল্লাহকে তাঁর নিজের প্রতিষ্ঠিত নেয়াজপুরে অবস্থিত ভুলুয়া কলেজ মাঠে কবরস্থ করা হয় । একজন মাটির মানুষ চিরনিদ্রায় শুয়ে আছেন । ২৮ এপ্রিল ২০১৭ ইং শুক্রবার তাঁর কবর জেয়ারত করতে গিযেছিলাম, আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়েছিলাম। তাঁকে আমি কাছ থেকে দেখার সুযোগ হযেছিল । আমি ১৯৯৬ সন থেকে ২০০১ ইং পযন্ত বর্তমানে বাংলাদেশ আওযামীলীগের সাদারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের যখন যুব, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন তখন তাঁর সহকারী একান্ত সচিব হিসাবে দাযিত্ব পালনকালে প্রায় মোমিন ভাইয়ের সাথে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল । তাঁকে দেখছি অত্যন্ত জনদরদী একজন নেতা হিসাবে, সাধারণ মানুষের বিপদ-আপদে সব সময ছুটে গিযেছিলেন । ছিল না কোন অর্থের লোভ । আজ এই মহান নেতা আর নেই, নোয়াখালীবাসী হারিয়েছে একজন নিবেদিত প্রাণ বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিককে।

Thursday, 2 February 2017

বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট শেখ শামসুল ইসলাম-এর জীবনী :-




বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট শেখ শামসুল ইসলাম-এর জীবনী :-


বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট শেখ শামসুল ইসলাম যশোর জেলা শহরের পি.টি.আই রোডস্থ সম্ভ্রান্ত্ম মুসলিম পরিবারে পৈত্রিক বাড়িতে পহেলা জানুয়ারী ১৯৫৬ খ্রীস্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মরহুম শেখ গোলাম সরোয়ার, পিতা একজন ভূস্বামী ও পরে যশোর জজ কোর্টের পেশকার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। মাতার নাম মরহুম রিজিয়া সরোয়ার।
শেখ শামসুল ইসলাম যশোর শহরস্থ পি.টি.আই.সরকারী প্রাইমারী স্কুল থেকে ৫ম শ্রেণী, যশোর সম্মিলনী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে যশোর বোর্ডের অধীনে অধিকাংশ বিষয়ে লেটার মার্কসহ বিজ্ঞানে প্রথম শ্রেণীতে ১৯৭২ সনে এস.এস.সি.পাশ করেন। নটরডেম কলেজ থেকে অধিকাংশ বিষয়ে লেটার মার্কসহ বিজ্ঞানে প্রথম শ্রেণীতে ১৯৭৪ সনে ঢাকা বোর্ডের অধীনে এইচ.এস.সি. পাশ করেন। তিনি ১৯৭৫ সনের প্রথম দিকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সেভেনলং কোর্সে ভর্ত্তি হন। ১৯৭৫ সনে ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সপরিবারে নির্মম হত্যাকান্ডের পর মায়ের নির্দেশে সেনাবাহিনীর ট্রেনিং সমাপ্ত না করে চলে আসেন, মা পুনরায় পড়াশুনা শুরম্ন করতে বলেন। এরপর ডিগ্রিতে ভর্ত্তি হন এবং যশোর সিটি কলেজ থেকে ১৯৭৯ইং সনে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এবং সাথে সাথে যশোর পলিটেকনিক্যাল কলেজে ভর্ত্তি হয়ে বৃত্তি প্রাপ্ত হন ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ডিপেস্নামা কোর্স সমাপ্ত করেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে জীববিজ্ঞানে মাস্টার্সে ভর্ত্তি হয়েছিলেন। তিনি ১৯৮৩ইং সনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন যশোর শহীদ মশিয়ুর রহমান ল'কলেজ থেকে এলএল.বি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ৩ মার্চ ১৯৮৫ ইং সনে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল থেকে আইন পেশা পরিচালনার সনদ প্রাপ্ত হয়ে যশোর জেলা আইনজীবী সমিতিতে যোগদান করে আইন পেশা শুরম্ন করেন। ১৯ মে ১৯৮৯ ইং সনে তিনি এশিয়ার বৃহত্তম আইনজীবী সমিতি ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য পদ গ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা মেট্রো বার আইনজীবী সমিতির সদস্য পদ গ্রহণ করেন ১৫ ডিসেম্বর ১৯৯০ ইং সনে।
তিনি ১৯৯০ ইং সনে তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলা বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা থানাধীন মরহুম নাজমুল কাউনাইন জমজম মিয়ার চতুর্থ কন্যা এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একান্ত্ম সচিব, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও পরবর্তীতে জাসদ নেতা কাজী আরিফের ভাগ্নি তাসলিমা সুলতানার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। মিসেস তাসলিমা আক্তার আলমডাঙ্গা বাদে মাজু সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিÿিকা হিসাবে কর্মরত। তিনি দুই পুত্র সন্ত্মানের জনক, প্রথমপুত্র শেখ মুক্তাদির ওয়ার্ল্ড বিশ্ববিদ্যাল, ঢাকায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্র ও দ্বিতীয়পুত্র আলমডাঙ্গা স্কুলে ৭ম শ্রেণীর ছাত্র।
তিনি ৮ম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় ১৯৬৮ সনে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতিতে পদার্পণ করেন। ১৯৬৯ সনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে খান টিপু সুলতান এবং মনি ভাইয়ের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যোগদান করে'৬৯ সনের গণ অভ্যূত্থানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সনের ২৫ মার্চে যশোর ক্যান্টমেন্টে পাক-সেনাদের তৎকালীন ই.পি.আর ও পুলিশের সহায়তায় স্থানীয় সাংসদ রওশন আলী এবং এডভোকেট মরহুম নুরম্নল ইসলামের নেতৃত্বে পাক-হানাদারদেরকে সর্বাত্বক প্রতিহত করায় অংশ গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে পাক-সেনারা যশোর নিয়ন্ত্রণে নিলে তিনি পায়ে হেঁটে পরিবারের সাথে মাগুরায় মামার বাড়ি যান। সেখান থেকে জুন মাসের কোন এক সময়ে মাগুরা ঝিনাইদহের মহেশপুরের বর্ডার দিয়ে ভারতের ২৪ পরগণা জেলার কাদিহাটী যুব শিবিরে আশ্রয় নিয়ে সেখানে ক্যাম্প কমান্ডার আমজাদ চেয়ারম্যান, কাশিয়ানী,ফরিদপুরের নিকট রিপোর্ট করেন এবং ট্রেনিং শুরম্ন করেন। আমজাদ চেয়ারম্যানের বাড়ি ছিল ফরিদপুর জেলার কাশিয়ানী থানায় এবং সম্পর্কে তাঁর মামা। কাদিহাটী যুব শিবিরে ভারতের সেনাবাহিনীর কমান্ডার জগজীবন রাম ট্রেনিং দান করেন। এক মাসের গেরিলা ট্রেনিং শেষে তাঁদের ১৫০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে ইউনিট কমান্ডার নাজমুলের নেতৃত্বে পাঠিয়ে দেওয়া হয় নড়াইল হয়ে ফরিদপুরের ভাটিয়াপাড়া। ভাটিয়াপাড়া এসে ১১ নং সেক্টরে মেজর হুদার অধীনে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। তাঁরা ভাটিয়াপাড়া পাক-আর্মীদের ক্যাম্প আক্রমণ করেন জুলাই মাসের শেষের দিকে এক সন্ধ্যায়, সেই যুদ্ধে তিনি অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তা মরহুম হেমায়েতের নেতৃত্বে সরাসরি অংশ গ্রহণ করেন। সেই যুদ্ধে পাক-হানাদার ৫ জন ও ২৫ জন রাজাকার নিহত হয় এবং ৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। পাক-হানাদারদের ক্যাম্পটি ধ্বংশ হয়, গোলা বারম্নদ সহ মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাম্পটি দখলে নেয়। ১৫ দিন পর পুনরায় পাক হানাদাররা শক্তি বৃদ্ধি করে ক্যাম্পটি তাদের দখলে নেয়। তখন রাজাকারদের উৎপাতবৃদ্ধি পায়, তারা গ্রাম-ছে-গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়। ফলে রামনগর সহ সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার লোক উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে হিন্দু-মুসলমান শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়।
আগস্টে কালিয়া থানা রাজাকার ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের অতর্কিত আক্রমণে ১০/১২ জন রাজাকার নিহত হয় এবং ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন, সেই আক্রমণে তিনি সরাসরি অংশ গ্রহণ করেন।
তিনি গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে ষ্টেনগান ও থ্রি নট থ্রি চালাতেন বলে জানান এবং গ্রেনেড হামলা করতে প্রশিÿণ প্রাপ্ত ছিলেন। এরপর পুনরায় ভারতে মুজিববাদী ট্রেনিং-এর জন্য তাঁকে পাঠানো হয়। আসামের দেরায় যাওয়ার কথা ছিল, অল্প বয়স বিধায় তাঁকে আর আসামে পাঠানো হয়নি। ২৪ পরগণায় কল্যাণে মুজিব বাহিনী হিসাবে উচ্চ পর্যায়ের গেরিলা ট্রেনিং প্রদান করে নভেম্বরের প্রথম দিকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়, বাংলাদেশে এসে পুনরায় ১১ নং সেক্টরের অধীনে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন, যশোর শহর সহ আশেপাশের থানায় বিভিন্নযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। পাক-আর্মীদের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে ফেলতে সÿম হন। একদিন সন্ধ্যার দিকে টি এন্ড টি রাজাকার ক্যাম্পে গ্রেনেড হামলায় অংশ গ্রহণ করেন। ডিসেম্বরের ৫/৬ তারিখের দিকে যশোর থেকে খুলনার দিকে যেতে ৫ মাইল দূরে রামনগরে পাক-হানাদাররা সরে যাওয়ার পথে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা তাদেরকে আক্রমণ করেন, সেইযুদ্ধেও তিনি মিত্রবাহিনীর সাথে সরাসরি অংশ গ্রহণ করেন। সেখানে বহু পাক-হানাদার হতাহত হয়। ৭ ডিসেম্বর যশোর স্বাধীনতা লাভ করে, পাক-হানাদাররা পায়ে হেঁটে খুলনার দিকে যেতে নোয়াপাড়া জুট মিল ও পিপলস জুট মিলে ক্যাম্প করে।
১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্ত্মানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফিরে আসেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু যশোরে প্রথম পদায়ন করিলে তিনি সহ ২০০ মুক্তিযোদ্ধা গার্ড অব অনার প্রদান করেন। বঙ্গবন্ধু তসবির মহলে সবাইকে ডেকে নিয়ে বলেন যাদের লেখাপড়ার বয়স আছে, তাহারা পড়াশুনা শুরম্ন কর, আমার দেশ গড়ার জন্য অনেক ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উকিল, ব্যারিষ্টার দরকার। সেই দিন রওশন আলী এম.পি-এর সাথে থেকে বঙ্গবন্ধুর সাথে তাঁর করমর্দন করার সুযোগ হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সকলে অস্ত্র জমা দেন চাচড়ার মিলিশিয়া ক্যাম্পে।
তাঁর পরিবারের চার ভাই মুক্তিযোদ্ধা ছিল। বড় ভাই হলো মরহুম মুক্তিযোদ্ধা শেখ সিরাজুল ইসলাম, তিনি পরবর্তীতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। মেজো ভাই মরহুম মুক্তিযোদ্ধা শেখ নুরম্নল ইসলাম এবং ছোট ভাই শেখ আলতাফুল ইসলাম, মুক্তিযুদ্ধের সময় সে হারিয়ে যায়, মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর তাকে পাওয়া যায়।
১৯৭৫ সনের ১৫ আগস্ট বিশ্ব ইতিহাসের নির্মম হত্যাকান্ড জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সপরিবারে শহীদ হওয়ার খবর তিনি নটরডেম কলেজের ছাত্র থাকাকালীন সকালে শুনেন। তখন শোকে বিহবল হয়ে ওঠেন। ফজর নামাজ পড়েন, নামাজ পড়ে পরম করম্নণাময় আলস্নাহ তালার কাছে জাতির জনক সহ পবিবারের সকলের রম্নহের মাগফিরাত কামনা করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তখন তিনি ঢাকার আরামবাগ এলাকায় থাকতেন। বাসার বাহির হয়ে দেখেন সেনাবাহিনী ট্যাঙ্ক নিয়ে বঙ্গভবন ঘিরে রেখেছে।
তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার জেয়ারতে দুই বার গিয়েছেন। সব সময় যেতে মন চায়। তাঁর ভারত ছাড়া আর কোন দেশে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। দেশে কঙ্বাজার, সুন্দরবন সহ অনেক জেলা ভ্রমণ করেছেন।
তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন বার এসোসিয়েশনেরও সদস্য। বর্তমানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি সম্পূর্ণ আস্থাশীল এবং বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তিনি ডঃ এম.এ. ওয়াজেদ মিয়া মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতি। যশোর রোটারেক্ট ক্লাবের চার্টাড প্রেসিডেন্ট ছিলেন। মতিঝিল রোটারী ক্লাবের সদস্য ছিলেন, অনুসন্ধানী বিজ্ঞানী ক্লাব যশোরের পরিচালক ছিলেন। তিনি খেলাধুলা পছন্দ করেন। একজন ভাল ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন। তিনি ঢাকা আইনজীবী মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের একজন সক্রিয় সদস্য। তিনি নবীন মাছ চাষী সমিতির প্রেসিডেন্ট ছিলেন। মাছ চাষ করতেন ৪০০০ একর হাওড় এলাকা নিয়ে। কৃত্রিম মাছের প্রথম হ্যাচারীর উদ্যোক্তা এবং গরীবদের পুনর্বাসনের একজন উদ্যোক্তা।
সাক্ষাৎকারটি ১৮ই ডিসেম্বর, ২০১৬ ইং গৃহীত।

Tuesday, 12 July 2016

জীবন সংগ্রামে দীর্ঘ সময় আদালত পাড়ায় মোঃ বাচ্ছু মিয়া







                                                           
                                                                    মোঃ বাচ্ছু মিয়া


         জীবন সংগ্রামে দীর্ঘ সময় আদালত পাড়ায় মোঃ বাচ্ছু মিয়া


ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের ৫ম তলায় পূর্বকোণে চা,বিস্কুট, কলা বিক্রি করেন মোঃ বাচ্ছু মিয়া। ১৯৬০ সনে মাত্র দশ বছর বয়সে ঢাকায় আসেন মোঃ বাচ্ছু মিয়া। তারপর থেকে ঢাকার আদালত পাড়ায়। প্রথমে হেঁটে হেঁটে পান.বিড়ি সিগারেট বিক্রি করতেন। ১৯৯৯ সনে মহানগর দায়রা জজ আদালত প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি উক্ত স্থানে চা,বিস্কুট, কলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ শুরু করেন। তিনি যখন কোর্টে এসেছেন দেখেছেন কোর্ট এলাকায় সুন্দর ফুল বাগান ও গাছের সারি।
গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী জেলার সদর থানাধীন এওয়াজবালিয়া ইউনিয়নের এওয়াজবালিয়া গ্রামে। পিতার নাম  মৃত মন্তাজ মিয়া। দেশ স্বাধীনের পর বিয়ে  করেছেন একই গ্রামের আমেনা খাতুনকে। দুই পুত্র ও দুই কন্যার জনক, সবাইকে বিয়ে- সাদী দিয়েছেন।
১৯৭১ সনের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দ্দী উদ্যানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কালজয়ী ভাষণ সোহরাওয়ার্দ্দী উদ্যানে উপস্থিত থেকে শুনেছেন। সে দিনের উত্তাল জনসমুদ্রের কথা এখনো ভুলতে পারেননি।
১৯৭১ সনের ২৫ মার্চের কালরাত্রিতে বিশ্ব ইতিহাসের বর্বোরচিত গণহত্যা ঢাকার লক্ষীবাজারে থেকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন। খুব ভয় পেয়েছিলেন।
দীর্ঘ প্রায় সাড়ে চার যুগ ঢাকা কোর্ট এলাকায় কাটিয়েছেন তিনি। বড় ছেলে ঢাকার  নবাবগঞ্জে ছোট বাড়ী করেছে। সেখানে বসবাস করেন তিনি এবং সেখান থেকে প্রতিদিন ভোরে ফজর নামাজ পড়ে কোর্টের  উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। রাতে বাসায় ফিরেন। প্রতিদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত কোর্ট এলাকায় থাকেন।
আমরা যারা নিয়মিত জজকোর্টে আসি তাদের অনেকে বাচ্ছু মিয়াকে দেখি অনেক বছর থেকে। মূখে কোন চিন্তার চিহ্ন নেই,বিরক্তি নেই, সুখী মানুষের মত সকলকে চা-বিস্কুট খাওয়াচ্ছেন। তিনি যেন জজকোর্টের একজন কালের সাক্ষী।


Tuesday, 5 April 2016

বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট পরিমল কুমার বিশ্বাস-এর জীবনীঃ-

                            *****বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট পরিমল কুমার বিশ্বাস-এর জীবনীঃ-******


 জাতীয় আইনজীবী ফেডারেশনের সদস্য সচিব, জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক ও  ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি ।
তিনি কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী থানাধীন বুজরুবাঁখই গ্রামের নিজ বাড়িতে ১ সেপ্টেম্বর ১৯৫০ সনে জন্ম গ্রহণ করেন। বর্তমানে ২/১ কোর্ট হাউজ ষ্ট্রীট, কোতয়ালী ঢাকায় চেম্বার নিয়ে আইনপেশা পরিচালনা করে আসছেন। পিতার নাম মৃত সন্তোষ কুমার বিশ্বাস ও মাতার নাম মৃত জগদেশ্বরী বিশ্বাস ।
তিনি কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী থানাথীন বুজরুবাঁখই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণি পাশ করেন। কুমারখালী এম.এন. হাই স্কুলে ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েন এবং কুমারখালী জে.এন. হাই স্কুল থেকে ১৯৬৭ সনে যশোর বোর্ডের অধীনে এস.এস.সি পাশ করেন। কুষ্টিয়া সরকারী কলেজ থেকে ’৬৯ সনে যশোর বোর্ডের অধীনে এইচ. এস.সি পাশ করেন। ’৭২ সনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কুষ্টিয়া সরকারী কলেজ থেকে বি.কম. ডিগ্রী অর্জন করেন।’৭৫ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.কম.এবং একই বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সেন্ট্রাল ল’ কলেজ থেকে এলএল.বি ডিগ্রী অর্জন করেন। ’৮৭ সনের ৮ এপ্রিল বাংলাদেশ বার কাউন্সিল থেকে আইনপেশা পরিচালনার অনুমতি প্রাপ্ত হয়ে এশিয়ার ঐতিহ্যবাহী ঢাকা আইনজীবী সমিতিতে ২৮ আগস্ট ১৯৮৮ সনে সদস্যভূক্ত হন। ২০০৭-০৮ সনে তিনি ঢাকা আইনজীবী সমিতির সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন।
স্কুল জীবন থেকে তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ শুরু করেন এবং তখনই কুমারখালী থানা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ’৬৫ সনে যখন ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হয় তখন মরহুম জননেতা আবদুর রাজ্জাকের নির্দেশে  সিভিল ডিফেন্স ট্রেনিং গ্রহণ করেন। সেই সময় আবদুর রাজ্জাক বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ছিলেন।’৬৮-’৬৯ সনে কুস্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন।
১৯৭১ সনে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ৬ এপ্রিল সাময়িকভাবে কুষ্টিয়া শত্রুমুক্ত হলে তিনিসহ সঙ্গী মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আবদুর রাজ্জাক, মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাসেম রবি, মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আযাদ (কামাল মাস্টার),মুক্তিযোদ্ধা সুনিল বিশ^াস, মুক্তিযোদ্ধা মরহুম লুলু সহ একসাথে নিজ বাড়িতে ভারত  গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং গ্রহণের জন্য বৈঠকে বসেন, বৈঠক শেষে তাঁর মাতা জগদেশ^রী বিশ^াসের নিকট থেকে অনুমতি নিয়ে ঐদিন রাতেই রওয়ানা দেন। কুমারখালী গড়াই নদীর খেয়াঘাট নৌকা যোগে পার হয়ে পদব্রজে তিন দিন ধরে হেঁটে ভারতের শিকারপুর সীমান্ত যান। সীমান্ত পার হয়ে পরের দিন ভারতের নদীয়া জেলার করিমপুর ক্যাম্পে পৌঁছান। সেখানে যাওয়ার পর নূরে আলম জিকু ও  আবদুল বারীর সাথে দেখা হয় এবং ঐ দিনই রাতে তোফায়েল আহম্মেদ ও নূরে আলম জিকু তাঁেদর  ছয় জনের ভিতর থেকে তাঁকে, আবদুর রাজ্জাক, আবুল কালাম আজাদ(কামাল মাস্টার), সুনিল াবশ্বাস ও লুলুকে উচ্চতর ট্রেনিং এর জন্য রিক্রুট করে, সেখান থেকে সন্ধ্যা ৭ টায় তাঁদেরকে গাড়িতে করে বেতায় ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। বেতায় ক্যাম্পে তাঁেদর সাথে আরো ৫ জন যোগ হয়। ৫ জনের নাম হলো তাজ মোহাম্মদ খান, শামসুল আলম পিন্টু,আবদুল গণি,মঞ্জু সাত্তার ও সুশীল বিশ^াস। সেখান থেকে  তাঁদেরকে গাড়িযোগে নিয়ে কলিকাতার প্রিন্স অব স্ট্রীটের একটি বাড়িতে তাঁদের থাকার ব্যবস্থা হয়। পর দিন হাওড়া স্টেশন থেকে ট্রেনযোগে ফারাক্কা গিয়ে নামেন। সেখানে ফেরী পার হয়ে ট্রেনে ওঠে তাঁরা জলপাই গুড়িঁ যান, জলপাই গুড়িঁ স্টেশন থেকে তাঁদেরকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর গাড়ি করে জলপাই গুড়িঁ ট্রানজিট ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। ট্রানজিট ক্যাম্পে তাঁর সাথে দেখা হয় আফতাব ভাই,(পরবর্তীতে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের ভি.সি.), হাসানুল হক ইনু,আ.ফ.ম. মাহবুবুল হক,মহিউদ্দিন( বর্তমানে মুন্সিগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি)।  সেখানে ৭ দিন থাকার পর তাঁদেরকে শিলচর বিমান বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে বিমান যোগে বাগডুগরা বিমান বন্দরে নামার পর সেনাবাহিনীর গাড়িতে করে  হাফলং ট্রেনিং সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। হাফলং-এ এক মাস ৭ দিন উন্নততর গেরিলা ট্রেনিং নেন। ট্রেনিং ইনস্টাক্টর ছিলেন  ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্ণেল বি.এন. চৌধুরীর, ট্রেনিং-এর নিয়ম ছিল প্রতিদিন সকাল ৬ টায় মাঠে গিয়ে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত ও পিটি প্যারেড করে ৭ টায় ব্যারাকে ফিরে নাস্তা করার পর মূল ট্রেনিং-এ নিয়ে যাওয়া হতো। পরে বেলা ১ টার পর্যন্ত থিওরিটিক্যাল ক্লাশ করে আবার ১ টা থেকে ২ টা পর্যন্ত লাঞ্চ ও ২ টার পর থেকে জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে প্র্যাকটিক্যাল করানো হতো। একমাস পার হওয়ার পর ৭ দিনের জন্য আলাদা পাহাড়ে নিয়ে উন্নত গেরিলা ট্রেনিং প্রদান করা হয়। এরপর ব্যারাকে আসার পর সেখান থেকে বিমান যোগে  কলিকাতার দমদম বিমানবন্দরে এসে নামেন। সেখান থেকে ব্যারাকপুর ক্যান্টনমেন্টের একটি ক্যাম্পে রাখা হয়। সেখানে ৪ দিন বিশ্রাম নেওয়ার পর ১১ আগস্ট ’৭১ ভারতীয় সেনাবাহিনীর গাড়িযোগে  বাংলাদেশের শিকারপুর সীমান্তে নিয়ে আসা হয়। তারপর ১৫ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল শিকারপুর সীমান্ত পার হয়ে খাদিমপুর চরে এসে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। পরের দিন সেখান থেকে রাত্রি বেলা রওয়ানা হয়ে গন্তব্য কুষ্টিয়ার কুমারখালী শিলাইদহ এলাকায় এসে সঙ্গী মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রাজ্জাকের বাড়িতে ওঠেন। তখন ফজর নামাজের আযান হচ্ছে। তাঁদের সাথেই ছিল মুজিব বাহিনীর জেলা কমান্ডার হিসেবে নোমান ভাই,আবু জাফর, আবদুর সাত্তার, আবদুল গনি, শামসুল আলম পিন্টু, লুলু, আবুল কালাম আজাদ(কামাল মাস্টার)। তখন কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পান রানু ভাই এবং ডেপুটি কমান্ডারের দায়িত্ব পান মরহুম আবদুর রাজ্জাক। ৮নং সেক্টরের অধীনে তোফায়েল আহম্মেদের কমান্ডে অধীনে অর্থাৎ মুজিব বাহিনীর অধীনে ছিলেন তাঁরা। সাথে আরো ছিলেন তাজ মোহাম্মদ খান, কুষ্টিয়ার দুবরারচর যুদ্ধে তাজ মোহাম্মদ খান শহীদ হন। সেই যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন নোমান ভাই ও আবু জাফর, তিনি সেই যুদ্ধে সরাসরি অংশ নেন। যুদ্ধ হয়েছিল পাকিস্তানী আর্মীর সাথে। ঐ যুদ্ধে ৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। সেই যুদ্ধে ৫ থেকে ৭ জন পাকহানাদার নিহত হয়। যুদ্ধে পাকহানাদাররা পিছু হেঁটে কুষ্টিয়া শহর থেকে আবার মর্টার সেলিং করতে করতে সামনে আসে। মর্টার সেলিং-এর কারণে ৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
২ ডিসেম্বর ’৭১ রাত দেড়টার সময় তাঁরা কুমারখালী পদ্মার পাড়ে হাসিমপুর বাজার নামক স্থানে পাকিস্তানী মিলিশিয়া বাহিনীর ক্যাম্প আক্রমণ করা হলে মিলিশিয়া বাহিনীর সাথে প্রচন্ড যুদ্ধ হয়, তখন মিলিশিয়া বাহিনী হাশিমপুর বাজারে অগ্নি সংযোগ করে পিছনের দিকে পালিয়ে যায় । সেখান থেকে মুক্তিযোদ্ধারা ডেপুটি কমান্ডার মরহুম আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে শিলাইদহ কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ির নিকটে থানা কমান্ডার মরহুম রানু ভাইয়ের সাথে যোগ দেন। সেখান থেকে রানু ভাইয়ের নেতৃত্বে তাঁরা কয়া বাজারে ক্যাম্পে আক্রমণ এবং দখল নেয় । সেখান থেকে পরদিন খোকসা থানার গোপুগ্রাম বাজারে   রাজাকার ক্যাম্পে আক্রমণে রানু ভাইয়ের নেতৃত্বে অংশ নেন এবং সেই যুদ্ধে রাজাকারদেরকে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করা হয় এবং সেখান থেকে ৭টি থ্রি নট থ্রি রাইফেল ও শতাধিক গুলি মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে ৯ ডিসেম্বর ভোর ৬ টা হতে সারাদিন ব্যাপি কুমারখালী শহরে মিলিশিয়া,রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর সাথে   মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচন্ড যুদ্ধ হয়। মূল যুদ্ধটা হয় কুমারখালী উপজেলা চত্বরে, সেই যুদ্ধে তিনিসহ মরহুম আবদুল বারী খানসহ অনেকে অংশ নেয় এবং সেই যুদ্ধে আলবদর বাহিনীর কমান্ডার সুলতান সহ তিনজন রাজাকার ও মিলিশিয়া বাহিনীর সদস্য মুক্তি বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়। সেই যুদ্ধ চলাকালিন সময়ে সময়ে কুমারখালী ষ্টেশন মাস্টার তাঁদেরকে কাছে খবর পাঠান  যে যশোর ক্যান্টনমেন্ট হতে একটি বিশেষ ট্রেন নিয়ে পাক-সেনাবাহিনী কুমারখালীর দিকে আসছে,এই খবর পাওয়ার সাথে সাথে তাঁরা চড়াইখাল গরাই ব্রীজের নিকটে অবস্থানকারী মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে তাৎক্ষণিকভাবে খবর পাঠানো হয়। সেখানে আবদুল গনি সোলায়মান জোয়ারর্দ্দার, আবদুর রহমান(মাস্টার), নুরুল ইসলামসহ আরো অনেকে ছিল।তাঁদের নেতৃত্বে ট্রেনটি গড়াই ব্রীজ অতিক্রম করার সাথে সাথে তাঁরা সেখানে লাইন চ্যুত করে দেয় এবং তখন সেখানে প্রচন্ড যুদ্ধ হয়, সেই যুদ্ধে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর অনেক জোয়ান মারা যায়। ঐদিনই কুমারখালী শহর থেকে তাঁরা রাজাকার,আলবদর ও মিলিশিয়া বাহিনীকে বিতাড়িত করে কুমারখালী মুক্ত করতে সক্ষম হন এবং বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।
দেশ স্বাধীনের পর তিনিসহ সকলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে মরহুম জননেতা আবদুর রাজ্জাক,মরহুম জননেতা ফজলুল হক মনি, জননেতা তোফায়েল আহমেদ,জননেতা সিরাজুল আলম খানের নির্দেশে ঢাকায় এসে বঙ্গবন্ধু ষ্টেডিয়ামে অ¯্র জমা দেই এবং বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে স্ব স্ব এলাকায় ফিরে যাই এবং দেশ গড়ার কাজে অংশ গ্রহণ করি।
তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ রেডিও-এর মাধ্যমে শুনে উজ্জীবিত হয়েছিলেন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সপরিবারে ১৯৭৫ সনের ১৫ আগস্টের বিশ্ব ইতিহাসের মর্মন্তিক হত্যাকান্ডের বিষয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন আবু সায়িদ হলে  ভোর ৬ ঘটিকার সময় শুনেন এবং স্তব্ধ ও মর্মাহত হন। সংবাদ জানার পর পর হল থেকে বের হয়ে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি আলী রেজা সাহেবের ভাই আলী নেওয়াজ সাহেবের বাসায় ওঠেন। সেখানে থেকে দলীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছিলেন।
হৃদয়ের টানে টুঙ্গিপাড়া বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে এ পর্যন্ত ২০ বারের মত গিয়েছেন। আজীবন প্রতি বছর যাওয়ার ইচ্ছা আছে।
তিনি বঙ্গবন্ধু শহীদ হওয়ার পর তাঁকে আটক করে কুষ্টিয়া জেলে পাঠানো হয়। সেখানে বাকশালের কুষ্টিয়া জেলা শাখার সেক্রেটারী জনাব এডভোকেট শামসুল আলম দুদু ভাই, বর্তমান কুষ্টিয়া পৌর মেয়র আনোয়ার আলী, সাবেক মন্ত্রী সরদার আমজাদ হোসেন,কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের ভি.পি. গিয়াস মিন্টু এবং বর্তমান জেলা পরিষদ প্রশাসক জাফর ভাই সহ তাঁরা অনেকে ডিটেশনমূলে কারাবরণ করেন।
তিনি রাজবাড়ী জেলার সদর থানাধীন আটদা পুনিয়া গ্রামে ১৯৮৯ সনের ২৪ নভেম্বর তারিখে আটদা পুনিযা হাইস্কুলের শিক্ষক মৃত সুধীর কুমার দাশের প্রথমা কন্যা স্বপ্না রানী দাসের সহিত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। মিসেস স্বপ্না রানী দাস বি.এ; বি.এড বর্তমানে ঢাকা শহীদ নবী মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। তিনি দুই কন্যার জনক। বড় কন্যা মাধুরী বিশ্বাস সফট্ওয়ার ইঞ্জিনিয়ার, সে সাধারন বীমা কর্পোরেশনের  এ্যাসিস্টেন্ট   ম্যানেজার পদে কর্মরত । স্বামী মিথুন কুমার দাস টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার পারা গ্রামের অধিবাসী মিথুন কুমার দাস টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার । বর্তমানে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সহকারী পরিচালক পদে কর্মরত । ছোট কন্যা ডাঃ সোমা বিশ্বাস গণস্বাস্থ্য মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে এম.বি.বি.এস পাশ করে বর্তমানে মিটফোর্ড হাসপাতালে গাইনী সার্জারীর উপর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন ।
তিনি ভারত সফর করেছেন,দেশে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত,রাঙামাটি, সিলেটের জাফলং,দিনাজপুরের রামসাগর, টুঙ্গীপাড়া, বগুড়া মহাস্থানগড়, সুন্দরবন,বরিশাল সহ অনেকগুলো জেলা সফর করেছেন।
বর্তমানে তিনি হিন্দু,বৌদ্ধ, খৃস্টান  ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য এবং জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় আইনজীবী ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন ।
তিনি অবসরে বই পড়েন, গান শুনেন । বাগান করতে ভালবাসেন । গ্রামের সাথে আছে নিবিড় সম্পর্ক, প্রতিমাসে কম পক্ষে দুইবার গ্রামের বাড়িতে যান ।
আইনাঙ্গনে তিনি একজন সজ্জন ভাল আইনজীবী, দীর্ঘ সময় ন্যায়ের সাথে আইনপেশা পরিচালনা করে আসছেন।
সাক্ষাৎকারটি ৩ ডিসেম্বর ২০১৫ সনে গৃহিত । গ্রহণে- এডভোকেট এ.কে.এম. আমিন উদ্দিন(মানিক), সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ,ঢাকা বার শাখা।   
 
    


Monday, 4 April 2016

বীরমুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট মোঃ মনিরুজ্জামানের জীবনী

                                     বীরমুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট মোঃ মনিরুজ্জামানের জীবনীঃ
           

এডভেকেট,বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট, অতিরিক্ত পি.পি. ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালত । “ কে বলেরে মুজিব নেই,মুজিব সারা বাংলায় এবং এক মুজিব লোকান্তরে লক্ষ মুজিব ঘরে ঘরে, এক মুজিবের রক্ত থেকে লক্ষ মুজিব জন্ম নেবে” । আওয়ামী ঘরোনায় জনপ্রিয় এই শ্লোগান দুটির সৃষ্টিকারী । স্পষ্টবাদী, ন্যায় পরায়ণ, নির্ভীক একজন আইনজীবী।
তিনি ৩১ মার্চ ১৯৫৭ খ্রীঃ গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী  থানার বেতুরিয়া ইউনিয়নের সাধুহাটি গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে ঢাকা জজকোর্টে আইন পেশায় নিয়োজিত আছেন । ব্যক্তিগত চেম্বারঃ পল্লবী প্লাজা,রোড নং-৭, সেক্টর-৭,পূরবী সিনেমা হলের পাশের্^,মিরপুর,ঢাকা-১২১৬।
পিতার নাম বীরমুক্তিযোদ্ধা মরহুম আবদুল মোতালেব মিয়া, মাতার নাম রহিমা বেগম, পিতা সেনাবাহিনীতে সুবেদার মেজর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পিতার ৮ সন্তানের মধ্যে মনিরুজ্জামান ছিলেন প্রথম সন্তান।
তিনি পুইশুর সরকারী প্রি-প্রাইমারী স্কুলে থেকে ১৯৬৭ সনে বৃত্তিসহ ৫ম শ্রেণি পাশ করেন। রামদিয়া এস.কে. হাইস্কুল থেকে ১৯৭২ সনে ঢাকা বোর্ডের  অধীনে মানবিক বিভাগ নিয়ে এস.এস.সি পাশ করেন। রামদিয়া এস.কে. কলেজ থেকে ১৯৭৪ সনে এইচ.এস.সি পাশ করেন। ১৯৭৬ সনে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগে অনার্সে ভর্ত্তি হন। ১৯৭৯ সনে দর্শনে অনার্স এবং ১৯৮০ সনে দর্শনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮১ সনে ঢাকার ধানমন্ডি ল’ কলেজে এলএল.বি-তে ভর্ত্তি  হন এবং ১৯৮৩ সনে এলএল.বি ডিগ্রি অর্জন করেন।  তিনি বাংলাদেশ বার কাউন্সিল থেকে ৫ অক্টোবর ১৯৮৮ সনে আইনপেশা পরিচালনার সনদ নিয়ে  এশিয়ার বৃহত্তম আইনজীবী সমিতি ঢাকা আইনজীবী সমিতিতে যোগদান করেন।
তিনি ৮ম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যোগদান করেন। রামদিয়া শ্রী শশী কোমল বিদ্যাপীঠে ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। রামদিয়া এস.কে কলেজ শাখার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি রামদিয়া এস.কে কলেজে ছাত্রলীগের ব্যানারে  ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ভি.পি. নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সনে কাশিয়ানী থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ১৯৭৪-৭৫ সনে গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মনোনিত হন। পরবর্তীতে বাকশাল গঠন হওয়ার পর জাতীয় ছাত্রলীগের গোপালগঞ্জ জেলার ৭ সদস্যের  কমিটির একজন নির্বাচিত হন।
তিনি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় সার্জেন্ট জহুরুল হক হল শাখার বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ও ১৯৭৯ সনে হল সংসদের জি.এস. নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭৬-৭৭ সনে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় আহবায়ক কমিটির সদস্য,পরে ১৯৭৮-৭৯ সনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক মনোনিত হন। ১৯৮০-৮১ সনের ছাত্রলীগের জালাল-জাহাঙ্গীর কমিটির সহ-সভাপতি মনোনিত হন। তিনি ১৯৮১ সন থেকে ১৯৮৫ সন পর্যন্ত দৈনিক বাংলার বাণীতে সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেন। তিনি যুবলীগের রাজনীতিতে যোগদান করে  আমির হোসেন আমু ও শেখ ফজলুল করিম সেলিমের কমিটিতে কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ও যুগ্ম সম্পাদক এবং জাহাঙ্গীর কবির নানকের কমিটিতে প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বিশ^বিদ্যালয় কর্মসংস্থান(বিকল্প)-এর উপদেষ্টা পরিষদের  চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৮৯ সনে বাংলাদেশ শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন। তিনি বৃহত্তম ফরিদপুর আইনজীবী সমিতির উপদেষ্টা হিসেবে আছেন। বৃহত্তর মিরপুর আইনজীবী সমিতির উপদেষ্টা, প্রাক্তন ছাত্রনেতা বঙ্গবন্ধু আদর্শ বাস্তবায়ন পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক, বাংলাদেশ আওযামী ওলামালীগ কেন্দ্রীয় কমিটির পরিচালক, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সংসদের  সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আইন পেশায় তিনি ১৯৯৬ সন থেকে ২০০১ পর্যন্ত ঢাকা জজকোর্টে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড ব্লাস্টের  প্রতিষ্ঠাতা সদস্য । তিনি বাংলাদেশ ল’ কলেজ-এর গভর্ণিং বডির সদস্য। বাংলাদেশ লুথারিয়াম মিশন (বি.এল,এম.ডি) ও ইয়াং খৃস্টান এসোসিয়েশনের লিগ্যাল( ওয়াই.এম.সি.এ) এর আইন উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। র‌্যাব-১০ এর আইন কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছেন। বর্তমানে ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ২০০৯ সন থেকে  অতিঃ পি.পি. হিসেবে দাযিত্ব পালন করে আসছেন।
১৯৭১ সনে ১৭ মার্চ মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নেওয়ার জন্য ভারতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। নিজ থানা কাশিয়ানী থেকে পায়ে হেঁটে  তিনি সহ ১৪৩ জন  নড়াইল জেলার লোহাগড়া যান। পরে হেঁটে যশোরের ঝিকর গাঁছা হয়ে বেনিয়ালী বাজার পৌঁছেন । সেখান থেকে বেনাপল সীমান্ত দিয়ে ভারতের ধনগাঁও অশোকনগর ক্যাম্পে পৌঁছান। সেখানে প্রাথমিক ট্রেনিং গ্রহণ করার পর তাঁদেরকে গোগরডাঙ্গা ক্যাম্পে পাঠানো হয়। সেখানে জেনারেল ওভানের নির্দেশনায়  ২১ দিন ট্রেনিং নেওয়ার পর তাঁদেরকে পাঠানো হয় দেরাদুনের কান্দুয়া ক্যাম্পে পাঠানো হয়। কান্দুয়া ক্যাম্পে তোফায়েল আহমেদের অধীনে ট্রেনিং গ্রহণ করেন। সেখানে তিন মাস গেরিলা ট্রেনিং নিয়েছিলেন। ট্রেনিং সমাপ্তির পর  সেপ্টেম্বর মাসের ৭ তারিখে যশোর হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ  করেন ১০৭ জন মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশে প্রবেশ করে সরাসরি গোপালগঞ্জ চলে যান নৌকা ও পায়ে হেঁটে। গোপালগঞ্জে গিয়ে কাওড়াকান্দি ক্যাম্পে গিয়ে মুজিব বাহিনীতে যোগদান করেন। তখন মুজিব বাহিনীর জেলা কমান্ডার ছিলেন শেখ শহীদুল ইসলামও কাশিয়ানী থানা কমান্ডার ছিলেন এ.এম. ইসমত কাদির গামা ।
তাঁর স্মরণীয় যুদ্ধ হলো অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে মধুমতী নদীর পাড়ে খুকরা ইতনা এলাকায় একটি সম্মূখ যুদ্ধ । সেই যুদ্ধে তিনি সরাসরি অংশ গ্রহণ করেছিলেন । সে দিন পাক সেনাবাহিনী  তিনটি লঞ্চ  যোগে গোপালগঞ্জ যাচ্ছিল। মুক্তিবাহিনীর অতর্কিত হামলায় পাক-হানাদাররা হত-বিহ্বল হযে পড়ে। সে দিন মুক্তিবাহিনী আক্রমণে পাক হানাদারদের ২টি লঞ্চ ডুবে যায় ও ৮৭ জন পাকসেনা নিহত হয়।  সেই যুদ্ধে ১৭জন মুক্তিসেনা শহীদ হন। তাঁর চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীনও সেই যুদ্ধে শাহাদাৎ বরণ করেন।
এর পরের স্মরণীয় যুদ্ধ হলো ১৭ নভেম্বর রাথৈই বাজার দিয়ে লঞ্চ যোগে পাকহানাদার যাওয়ার সময় অতর্কিত আক্রমণ । সেই যুদ্ধে ৭ জন পাকসেনা নিহত হয়।
এছাড়া ভাটিয়ারা পাড়া ক্যাম্পে মুজিব বাহিনীর বিভিন্ন সময়ের আক্রমণে সরাসরি অংশ গ্রহণ করেন। ভাটিয়ারা পাড়া ক্যাম্পের যুদ্ধ ৪ জানয়ারী ১৯৭২ পর্যন্ত চলে।
মুক্তিযুদ্ধ সমাপ্তির পর বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ঢাকায় এসে পিলখানা তৎকালীন বি.ডি.ক্যাম্পে উঠেন এবং বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে অস্ত্র জমা দেন।
  তিনি ১৯৭৫ সনের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সপরিবারে হত্যাকান্ডের পর মারাত্মক ভাবে মর্মাহত হয়েছিলেন । জাতির জনক ১৬ আগস্ট ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের  এক কর্মসূচীতে আসার কথা ছিল। সে দিন তিনি সহ ছাত্র লীগের কেন্দ্রীয়, বিশ^বিদ্যালয় ও হল শাখার সকলে সার্জেন্ট জহুরুল হক হল শাখার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। ১৬ আগস্ট ভোর ৫ টার সময় জহুরুল হক হলে থেকে শুনতে পান ইতিহাসের সেই নির্মম,হৃদয় বিধারক হত্যাকান্ডের খবর । সেই দিন হত্যা করা হয়েছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ তাঁর স্ত্রী  বেগম  ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বড় পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, ছোট পুত্র শেখ রাসেল, শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল, শেখ জামালের স্ত্রী রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাছের,  শেখ ফজলুল হক মণি, মণির গর্ভবতী  স্ত্রী আরজু মণি, মন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাত, আবদুর রব সেরনিয়াবাতের কন্যা বেবী, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতী শুকান্ত বাবু, বড় ভাইয়ের পুত্র সজিব সেরনিয়াবাত এবং আত্মীয় বেনতু খান। বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে সে দিন দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শহীদ হোন এস.বি অফিসার ছিদ্দিকুর রহমান, কর্ণেল জামিল, সৈনিক সৈয়দ মাহবুবুল হক।
বিশ্ব ইতিহাসের সেই নির্মম হত্যাকান্ডের সংবাদ শুনে তিনি শাহাবুদ্দিন, রউফ সিকদার, কামাল মজুমদার, শহীদ, সিরাজ, লিটু, সত্যভক্ত,গোলাপ সহ মোস্তফা মহসিন মন্টু ভাইয়ের ৩০২ নং এলিফ্যান্ট রোডের বাসার দিকে যান । বাসায় গিয়ে দেখেন মন্টু ভাই বাসায় নাই, শুনতে পান মন্টু ভাই শেখ ফজলুল হক মনির রক্তাক্ত লাশ নিয়ে তৎকালীন পি.জি হাসপাতাল বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গেইটে গেছেন। তখন তিনিও সেখানে যান । দেখেন পি.জি. হাসপাতালের গেইট খোলা হচ্ছে না। পি.জি. হাসপাতালের গেইট না খোলায় তাঁরা শেখ মনির লাশ নিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ইমার্জেন্সীতে যান। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পর দেখেন একের পর এক লাশ আসছে। লাশের মধ্যে আসে আবদুর রব সেরনিয়াবাত সহ ১৬ জনের লাশ। ঐ সময় তিনি, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোস্তফা মহসিন মন্টু, শাহাবুদ্দিন  সহ কয়েকজন মেডিক্যালের ইমার্জেন্সিতে ছিলেন। এর মধ্যে শুনতে পান সেনাবাহিনী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ঘিরে ফেলেছে। তখন মন্টু ভাই শেখ ফজলুল করিম সেলিমকে নিয়ে কেরাণীগঞ্জ চলে যান। তিনি সহ সকলে অন্যান্যদের লাশ আনতে বের হন। কেরাণীগঞ্জ যাওয়ার সময় শেখ সেলিম বলে যান তোমাদের  যদি কিছু করার থাকে ব্যবস্থা কর। তখন তাঁরা সকাল ৯টার দিকে জগন্নাথ হলে গিয়ে মুকুল বোস, বিজু খান, ইউনুছ, কামাল মজুমদার, শাহাবদ্দিন লিটু, সিরাজ সহ আনুমানিক ১৭ থেকে ২০ জন মধুর ক্যান্টিনে যান। মধুর ক্যান্টিনে গিয়ে ১৬ জন জীবন বাজি রেখে সপরিবারে জাতির জনকের হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে মিছিল বাহির করেন। মিছিলটি কলাভবন প্রদক্ষিণ করে  নীলক্ষেত  মোড়ে এসে সেনাবাহিনী কামান ও ট্যাঙ্ক দেখে নিরুপায় হয়ে যে যার নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। তখন তিনি সহ অন্যরা জহুরুল হক হলের ৩০২ নং কক্ষে গিয়ে সিদ্ধান্ত নেন, যে যার এলাকায় গিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য জনগণকে সংগঠিত করবেন।
তিনি লঞ্চে করে  দুই দিনে গোপালগঞ্জ পোঁছান। সেখানে গিয়ে দেখেন গোপালগঞ্জ শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।  তখন তিনি, লুৎফুর রহমান বাচ্চু(বর্তমানে উপজেলা চেয়ারম্যান),হারুন, আক্কাস, ইউসুফ,রউফ সিকদার,মুরাদ ভাই সহ বঙ্গবন্ধুর একটি ছবি সংগ্রহ করে গোপালগঞ্জ কোর্ট-কাছারীর পাশে বঙ্গবন্ধুর নিজস্ব খালী বাড়িতে ১৯ আগস্ট ১৯৭৫  সনে রাত ১২টা ১ মিনিটের  সময় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ছবিতে হাত ছুঁয়ে  নিজেদের  জীবন বাজী রেখে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য শপথ গ্রহণ করেন। তিনিই প্রথম শ্লোগান ধরেন “ কে বলেরে মুজিব নেই,মুজিব সারা বাংলায়” এবং এক মুজিব লোকান্তরে লক্ষ মুজিব ঘরে ঘরে, এক মুজিবের রক্ত থেকে লক্ষ মুজিব জন্ম নেবে”। এই শ্লোগান দুটি ক্রমান্বয়ে মুজিব হত্যার বিচারের জন্য সারা বাংলায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এক কথায় আজও বঙ্গবন্ধু অনুসারীদের কাছে জনপ্রিয় এই শ্লোগান দুটির সৃষ্টিকারী মোঃ মনিরুজ্জামান। উক্ত শপথ ও শ্লোগানের পর সকলে যে যার থানা এলাকায় চলে যান। তিনি তাঁর এলাকা কাশীয়ানী চলে যান। কাশিয়ানীতে তিনি মুজিব বাহিনীর তৎকালীন প্রধান ইদ্রিস ভাই, সিরাজুল হক মিয়া, মোঃ মোক্তার হোসেন(বর্তমান কাশিয়ানী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সহ উক্ত গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানীতে এক সপ্তাহ সংগঠিত করে পুনরায় ঢাকা জহুরুল হক হলে এসে কাজ শুরু করেন ।
তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সনের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ মঞ্চের খুব কাছে থেকে শুনেছিলেন। ডঃ জলিল সহ তিনি সে দিন জনসভায় গিয়েছিলেন। জাতির জনক “জয় বাংলা” বলে ভাষণ শেষ করেছিলেন যা আজও কানে বাজে। এখনো সেই ভাষণ শুনলে আবেগ আপ্লুত হয়ে যান।
তিনি ১৯৮৩ সনের ফেব্রুয়ারী মাসে ব্রাম্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর থানাধীন পুলিশের সাবেক ডি.আই.জি. মরহুম আবদুর রশিদের ৩য় কন্যা শাহানারা বেগমকে বিয়ে করেন। শাহানারা বেগম ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে লাইব্রেরী সাইন্সে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রিধারী এবং ওয়াই.এম.সি স্কুলে দীর্ঘ ২২ বছর প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
জনাব মনিরুজ্জামান ১ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তানের জনক। পুত্র- আশফাকুল মনির, বি.এস-সি ইঞ্জিনিয়ার এবং ফেডেক্স ইন্টারন্যাশানাল কোম্পানীতে আই.টি. প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন। আশফাকুলের স্ত্রী মিমি ইডেন কলেজ থেকে গার্হস্থ্য বিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রিধারী এবং দুটিতেই প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকারীণী।
কন্যা- ফারজানা জামান মিথীলা, ব্র্যাক বিশ^বিদ্যালয়ে আইন বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষের  ছাত্রী। মিথিলা বিবাহিতা ও তার স্বামী ডাঃ এস.এম. আর.কে.শামীম। ডাঃ শামীম বর্তমানে ইব্রাহিম মেমোরিয়াল হাসপাতাল(বারডেমে) কর্মরত আছে।
জনাব মনিরুজ্জামান ভারত, সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, মালয়েশিয়া সফর করেছেন। বাংলাদেশে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, সুন্দরবন, সিলেটের জাফলংসহ ছাত্রলীগের রাজনীতির সুবাদে সারাদেশ সফর করেছেন। হৃদয়ের টানে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ১৯৭৬ সন থেকে বার বার গিয়েছেন এবং আজীবন সেখানে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর মাজার জেয়ারতের ইচ্ছা আছে। 
তিনি একজন ন্যায়পরায়ণ,স্পষ্টবাদী, নির্ভীক আইনজীবী ।

সাক্ষাৎকারটি ৭ ডিসেম্বর ২০১৫ খ্রীঃ গৃহিত । গ্রহণে-  এডভোকেট এ.কে.এম. আমিন উদ্দিন (মানিক), সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ,ঢাকা বার শাখা ।